ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবি ড. ইউনূসের

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘ ইস্যুটির দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখনই কার্যকর করা উচিত। কেবল ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমারেখা ফিরিয়ে নিয়ে ইসরায়েল–ফিলিস্তিনের মধ্যে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি সবসময় মানুষকে আশার বাণী শুনিয়েছি, কখনো ভয় দেখিয়ে কিছু করা আমি সমর্থন করিনি। কিন্তু আজ আমাকে সেখান থেকে সরে এসে ভয়ংকর কিছু কথা বলতে হচ্ছে। আজ আমি সতর্ক করছি—চরম জাতীয়তাবাদ, অন্যের ক্ষতি হয় এমন ভূরাজনীতি, এবং অন্যের দুর্ভোগ ও পীড়নের প্রতি ঔদাসীন্য বহু দশকের পরিশ্রমে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি তা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
গাজার সংকটকে 'মর্মান্তিক' হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সবচেয়ে মর্মান্তিক চিত্র আমরা দেখছি গাজায়। শিশুরা না খেয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করছে, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, হাসপাতাল, স্কুলসহ একটি গোটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সাথে আমরাও একমত যে আমাদের চোখের সামনেই একটি নির্বিচার গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে; আমাদের দূর্ভাগ্য যে মানবজাতির পক্ষ থেকে এর অবসানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
তিনি বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। কিন্তু যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আত্মত্যাগ করেছিলাম তা গত পাঁচ দশকে বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। জনগণকে বারবার সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, চলতি বছর পালিত হয়েছে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান'-এর প্রথম বার্ষিকী, যেখানে তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করেছিল। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই অভ্যুত্থান বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। আর সেই দায়িত্বই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে জনগণ।
ভেঙে পড়া রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাহী আদেশে সংস্কার চালানো সম্ভব হলেও সরকার বেছে নিয়েছে কঠিন পথ—অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রক্রিয়া। এজন্য বিচার বিভাগ, শাসনব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি দমন ও নারী অধিকারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
তিনি জানান, এই কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির জন্য ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এর ফলশ্রুতিতেই গত জুলাই মাসে সব দল একসঙ্গে 'জুলাই ঘোষণা'র মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রমে সময়াবদ্ধ অঙ্গীকার করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অঙ্গীকারের ফলে আগামী নির্বাচনে যে দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার বাস্তবায়নে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর কখনো হুমকির মুখে পড়বে না।
ড. ইউনূস জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে নাগরিকবান্ধব সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
Comments