বেঙ্গল ক্রিকেটের নেতৃত্বে ফিরলেন সৌরভ গাঙ্গুলি

ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া'র (বিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি আবারও এলেন বাংলার ক্রিকেটের নেতৃত্বে। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। গতকাল (সোমবার) সিএবি'র প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে বড়ভাই স্নেহাশিষ গাঙ্গুলির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সৌরভ। এই পদে গত তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন স্নেহাশিষ।
এক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সৌরভ। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সিএবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই সাবেক অধিনায়ক। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য এবং প্রচুর প্রতিভাকে দিকনির্দেশনা ও পরিচর্যা করার কাজ তিনি চালিয়ে যাবেন।
বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাঙ্গুলি বলেন, 'আমি এর আগে পাঁচ বছর সভাপতি হিসেবে কাজ করেছি। আমরা সেরা কাজটাই করব। ভারতে ক্রিকেটের প্রতি অসীম উন্মাদনা রয়েছে। প্রচুর প্রতিভা আছে। সেই প্রতিভাকে সঠিক পথে পরিচালনা করাই আমাদের দায়িত্ব।'
সিএবিতে প্রথম মেয়াদ শেষ করার পর গাঙ্গুলি ২০১৯ সালে বিসিসিআই সভাপতি হন এবং ২০২২ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর রজার বিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন।
চলতি বছর শুরুর দিকেই গাঙ্গুলিকে আবারও আইসিসি পুরুষদের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি প্রথমবার এই দায়িত্ব নেন ২০২১ সালে।
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়ের প্রতিক্রিয়ায় গাঙ্গুলি বলেন, 'ভারত খুবই ভালো দল। আমাদের এশিয়া কাপ জেতার ভালো সুযোগ রয়েছে। আশা করি আমরা ভালো খেলব।'
এদিকে বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হওয়ার অপেক্ষায় থাকা দিল্লির সাবেক তারকা মিঠুন মানহাসকে অভিনন্দন জানিয়ে গাঙ্গুলি বলেন, 'আমি তাকে অভিনন্দন জানাই কারণ এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও দক্ষ বোর্ডের সভাপতি হওয়া অনেক বড় দায়িত্ব। ভারতীয় ক্রিকেটাররা অসাধারণ প্রতিভাবান। তাদের পরিচালনা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া বিশাল দায়িত্ব। আমি আশা করি তিনি তার দলকে সঙ্গে নিয়ে খুব ভালো কাজ করবেন।'
আগস্টে রজার বিনি পদ ছাড়ার পর থেকে বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের পদ খালি রয়েছে। বর্তমানে সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইএসপিএনক্রিকইনফোর তথ্যানুযায়ী, মানহাস এই পদে এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী।
আরেক সাবেক ক্রিকেটারও বোর্ডের শীর্ষ পদে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের সাবেক স্পিনার রঘুরাম ভাট সম্ভবত কোষাধ্যক্ষ হবেন। বর্তমানে তিনি কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
আগামী মাসে ৪৬ বছরে পা দেওয়া মানহাস দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত। তিনি বিসিসিআই নিয়োজিত উপ-কমিটির সদস্য, যারা জম্মু ও কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন তদারকি করে। জম্মুতে জন্ম নেওয়া মানহাস ২০১৫ সালে দিল্লি ছেড়ে জম্মু ও কাশ্মীরে যোগ দেন এবং ২০১৬ সালে অবসরে যান। অবসরের পর তিনি বিভিন্ন কোচিং ভূমিকায় কাজ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আইপিএলের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, পাঞ্জাব কিংস ও গুজরাট টাইটানস। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং পরামর্শকও ছিলেন।
একজন সফল ঘরোয়া ক্রিকেটার হিসেবে মানহাস ১৯৯৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ১৫৭টি ফার্স্ট-ক্লাস ম্যাচ খেলে ৯৭১৪ রান করেছেন। লিস্ট-এ ম্যাচে (১৩০) তিনি করেছেন ৪১২৬ রান এবং ৯১টি টি-টোয়েন্টিতে ১১৭০ রান। ভারতের ঘরোয়া সার্কিটে তিনি অন্যতম সফল ব্যাটার হিসেবে পরিচিত।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার দিল্লিতে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মানহাসের নাম উঠে আসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ, রাজীব শুক্লা, বিসিসিআই সম্পাদক দেবজিত সইকিয়া, দিল্লি অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্টস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (ডিডিসিএ) সভাপতি রোহন জেটলি এবং বোর্ডের সাবেক সম্পাদক নিরঞ্জন শাহ।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ে বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় বিভিন্ন পদে নির্বাচন হবে। তবে নতুন কোনো মনোনয়ন জমা না পড়লে দিল্লি বৈঠকে আলোচিত নামগুলোই চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
দেবজিত সইকিয়া বিসিসিআইয়ের সম্পাদক হিসেবে বহাল থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রাজীব শুক্লা সহ-সভাপতির পদেই থাকবেন। বর্তমান কোষাধ্যক্ষ প্রভতেজ ভাটিয়া জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। তিনি রোহন দেসাইকে প্রতিস্থাপন করবেন। সৌরাষ্ট্রের সাবেক অধিনায়ক জয়সূর্য শাহ সম্ভবত এপেক্স কাউন্সিলে যোগ দেবেন, আর মিজোরামের খাইরুল জামাল মজুমদার আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলে স্থানান্তরিত হবেন।
Comments