মুসলিম বিশ্ব কি হুঙ্কারই দেবে, নাকি বাস্তবে কিছু করতে পারবে?

সম্প্রতি ৪০টির বেশি আরব এবং ইসমালিক দেশের নেতারা কাতারের রাজধানী দোহায় এক সম্মেলনের আয়োজন করে জানিয়েছে তারা ন্যাটোর ধাঁচে সামরিক জোট তৈরি করবে।
দোহায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর এই সম্মেলন আহবান করা হয়। সোমবারের এই আরব-ইসলামিক সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীদের সুর ছিল নিঃসন্দেহে ইসরায়েলের প্রতি কঠোর। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বৈঠকের প্রস্তাবগুলোকে বাস্তবায়নের মতো স্পষ্ট পদক্ষেপ আসলেই আরব ও মুসলিম বিশ্ব নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে।
এই বৈঠক আহ্বান করা হয়, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের দোহার ওপর বেপরোয়া হামলার পর, যেখানে তারা হামাস সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যকেও লক্ষ্যবস্তু করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল অবিরামভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে আক্রমণ করছে - মূলত ইরান ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের। কিন্তু এবার লক্ষ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। একটি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত রাজতন্ত্র, যাদের আবার হামাসের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে, সেই দেশে হামলা সবাইকেই হতবাক করেছে। হয়তো লক্ষ্য পরিবর্তনের এই নতুন দিকটাই বুঝতেই ইসলামী বিশ্বের রাজা-আমির ও শাসকেরা দৌড়ে দোহায় এসে বসেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কার্যকর কোনো পরিকল্পনা খুব কমই বেরিয়ে এসেছে এ সম্মেলন থেকে।
উদাহরণস্বরূপ, রাষ্ট্রগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ইসরায়েলের সঙ্গে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। অথচ আশা করা হয়েছিল এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে, কেবল অস্পষ্ট পরামর্শ নয়। মুসলিম বিশ্ব যখন আলোচনা করছে, তখনও ইসরায়েল গাজায় রক্তপাত চালিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার তেলআবিব গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে। এদিকে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন বলেছে,ইসরায়েল আসলেই গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। এটি কেবল সাম্প্রতিকতম বিশেষজ্ঞ মতামত, যা আবারও নিশ্চিত করছে যে জায়নিস্ট রাষ্ট্র আসলে একবিংশ শতাব্দীর হলোকাস্ট চালাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি জনগণ যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করেছে, এবং খুবই বাস্তব আশঙ্কা রয়েছে যে ইসরায়েল তাদের তলোয়ারের জোরে অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের কৌশলের অংশ হিসেবে আরও মুসলিম রাষ্ট্রকে আক্রমণ করবে।
তাই আরব লীগ এবং ওআইসি সম্মেলন থেকে আরও অনেক কিছু প্রত্যাশা করা হয়েছিল। যেমন - ইসরায়েল ও যারা তার গণহত্যায় অর্থায়ন ও সহায়তা করে তাদের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বয়কট ঘোষণা করা উচিত ছিল একযোগে, বিকল্প হিসেবে নয়। পদক্ষেপবিহীন কথা মুসলিম বিশ্বের ভেতরের বিভাজন ও দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।
অতিরিক্তভাবে, গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল - জিসিসি যে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব ব্যবহার করে ইসরায়েলকে থামাবে -এটিও বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যেই ইহুদীপন্থী, যার সদস্যরা ইসরায়েলের সব অপরাধ রক্ষাকে ধর্মীয় ও মতাদর্শগত দায়িত্ব মনে করে। তাই, যদি আরব ও মুসলিম ব্লক সত্যিই গাজায় চলমান এই গণহত্যা বন্ধ করতে চায় এবং তাদের ভ্রাতৃসম আরও রাষ্ট্রকে ইসরায়েলের টার্গেটে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে চায়, তবে তাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং ইসরায়েলের দায়মুক্তি শেষ করার মতো কার্যকর পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
Comments