ট্রাম্প-জেলেন্সকি বৈঠক থেকে যা পাওয়া গেল

সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা ইউরোপের বন্ধুদের নিয়ে হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ট্রাম্পের আগেরবারের কথা মনে রেখে এবার স্যুট পরেই গিয়েছিলেন,তবে টাই ছিল না। প্রথমে জেলেনস্কির সঙ্গে একান্ত বৈঠক সারেন ট্রাম্প। পরে ইউরোপীয় নেতারাও যোগ দেন বৈঠকে। দ্বিতীয় বৈঠক মাঝপথে থামিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একটি ত্রিপক্ষীয় (আমেরিকা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে) বৈঠকের জন্য পুতিনকে প্রস্তাব দেন পুতিন। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে কথা হয়েছে দু'জনের। যদিও পরে জানা যায়, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আগে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। ওই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় থাকবেন শুধু জেলেনস্কি এবং পুতিন।
তাই বোঝা যাচ্ছে যে, শীঘ্রই মুখোমুখি বসতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে জেলেন্সকি স্পষ্ট করেছেন যে, ওই বৈঠকে কোনও আগাম শর্ত চাপানো যাবে না।
এক নজরে ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকের ফলাফল:
বৈঠকের মূল ফলাফল ও প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও সমর্থন
ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতৃত্বাধীন "সুরক্ষা গ্যারান্টি" প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন, যদিও তিনি ন্যাটো সদস্যপদ দিচ্ছেন না। বৈঠকে "সম্পূর্ণ নিরাপত্তা" প্রদানের প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপীয় "কোয়ালিশন অব দ্যা উইলিং" গঠনের পরিকল্পনা উঠে এসেছে। বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউসের বাইরে জেলেনস্কি জানান,ইউরোপীয়দের আর্থিক সাহায্যে আমেরিকা থেকে ৯ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র কিনবে ইউক্রেন। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমেরিকা থেকে এই অস্ত্র কেনা হবে।
২. যোগাযোগ ও সৃষ্টিশীল ভঙ্গি
পূর্ববর্তী উত্তপ্ত বৈঠকের সঙ্গে তুলনা করলে, এ বার ট্রাম্প - জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে আচরণ ছিল অনেক বেশি কূটনৈতিক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ।
৩. ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতি
ট্রাম্প তৎক্ষণাৎ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং বলেছেন তিনি পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজন করছেন,তারপর একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে। তবে এখনো কোনো নিশ্চিত সময় বা স্থান নির্ধারণ করা হয়নি।
৪. ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বৈঠককে "ভেরি গুড এন্ড কন্সট্রাকটিভ" বলেছেন। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে এবং অন্য ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্প-জেলেনস্কি-নেতৃবৃন্দের আলোচনাকে অত্যন্ত সফল ও ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ইউরোপীয় নেতারা যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধভাবে সরাসরি আলোচনা চালানোর গুরুত্ব তুলে ধরে,বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট কোন ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ।
৫. সামগ্রিক চিত্র ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
বৈঠক একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে,তবে কোনো আনুষ্ঠানিক বা চূড়ান্ত শান্তি সনদ বা চুক্তি হয়নি। পরবর্তী দিনগুলোতে নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও পরিকল্পনা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউক্রেন ও ইউরোপের কর্মকর্তারা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন,কিন্তু তার আয়োজন ও সময় এখনও নির্ধারিত হয়নি।
সারসংক্ষেপে
নিরাপত্তা গ্যারান্টি: ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজি।
সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ: এই বৈঠক আগের তুলনায় অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক ছিল।
ত্রিপাক্ষিক বৈঠক প্রস্তুতি: ট্রাম্প পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে আলোচনার আয়োজন করছেন, যদি সবকিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সমঝোতা ও ভূখণ্ড: ইউরোপীয় নেতারা রুশ ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
শান্তিচুক্তি: কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি, তবে ভবিষ্যতে আলোচনার সম্ভাবনা আছে।
এই বৈঠক পরবর্তী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ভিত্তি তৈরি করেছে -বিশেষ করে নিরাপত্তা ও আলোচনার কাঠামো নিয়ে।
Comments