ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক থেকে যা পাওয়া গেল

আজ যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অনুষ্ঠিত উচ্চ-স্তরের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘণ্টা আলোচনা করলেও কোনও চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি, বিশেষ করে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত কোনো সমঝোতা হয়নি ।
ট্রাম্প বৈঠককে "খুব ফলদায়ক" বা "ভালো অগ্রগতি" হিসেবে বর্ণনা করলেও "কোনো চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি নেই" বলে মন্তব্য করেন । পুতিন বিজ্ঞপ্তিতে বলেন বৈঠকটি "উপলব্ধি"-র পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যৎ এক সম্ভাব্য মৌলিক সম্পর্কের ভিত্তি হতে পারে ।
সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে, দুই নেতা কোনো চুক্তি করেননি, তবে কিছু "প্রগতি" বা "আগ্রহের সতর্ক সংকেত" পাওয়া গেছে।
প্রতীকী এবং কূটনৈতিক আংগিকতা:
- যথার্থতা ও সৌজন্য গুরুত্ব দিয়ে মার্কিন পক্ষে ট্রাম্প এক ভিনদেশি নেতাকে লাল গালিচা, সামরিক উইং ও বিপুল ভাণ্ডার দিয়ে অভ্যর্থনা জানান, যা পুতিনের গ্লোবাল প্রভাবকে দৃঢ় করতে সহায়ক—কোনো সামরিক ছাড় বা যুদ্ধবিরতি না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে রাজকীয় আচরণ পরোক্ষভাবে কূটনৈতিক সুবিধা এনে দিয়েছে পুতিনের জন্য ।
- একদিকে ট্রাম্প প্রতিরক্ষা প্রদর্শন করেন, অন্যদিকে পুতিন তার বক্তৃতায় ন্যাটো এবং ইউক্রেনকে নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান পুনরায় উপস্থাপন করেন ।
- বিশেষ চাঞ্চল্য হলো সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ও পুতিন কোন প্রশ্ন গ্রহণ করেননি, যা বৈঠকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে ।
ইউক্রেনের ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়া:
- ট্রাম্প বৈঠকের পর জোর দিয়েছিলেন—"এখন সব কিছু নির্ভর করছে জেলেনস্কির উপর" এবং "তিনি আপোস করবেন"—এভাবে যুদ্ধ সমাধানে ইউক্রেনকে দায়ী করলেন ।
- অন্যদিকে, ইউক্রেন দিব্যি দাবি করেছিল—"এই যুদ্ধে শেষ সঠিক সমাধান কেবল ইউক্রেনকে কোনো ভৌগোলিক ছাড় না দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা"—এ এবং ট্রাম্পের একচেটিয়া বৈঠকে না রাখার প্রতি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ পায় ।
- ট্রাম্প বিরোধিতাকে অগ্রাহ্য করে ইউক্রেনকে আপসের দায়িত্ব চাপাতে চাইলে এটি ইউক্রেনের আঞ্চলিক নাগরিকতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে—এ ধরনের সমালোচনা পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ ও ইউক্রেনীয় নেতাদের মধ্যে দেখা গেছে ।
বিশ্লেষক মতামত ও পরিণাম:
- আটলান্টিক কাউন্সিল বলছে - "আমরা পৌঁছাইনি"—এ বৈঠকের ফলাফল ছিল যে, পুতিন কখনই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হননি, তবে তিনি পশ্চিমা বিশ্বে তার বৈধতা অর্জনে সফল হয়েছেন ।
- দ্যা গার্ডিয়ান লিখেছে—উপর্যুক্ত "উপলব্ধি" ও "প্রগতি" প্রলোভনে ঢাকা অথচ চুক্তিহীন মাঠ; এবং পুতিনই পেয়েছেন কূটনীতিকী বিজয়—যদিও তিনি সম্ভাব্য "রেফারেন্স পয়েন্ট" হিসেবে থেকে গেছেন ।
- অপরদিকে, নিউ ইয়র্কার এই বৈঠককে কূটনৈতিক আত্মপরাজয় উল্লেখ করেছে, কারণ পুতিনকে আন্তর্জাতিক দৃশ্যে সৌজন্যে ঠেলেই আসলেও ট্রাম্প যুদ্ধের বিরতি বা শান্তির কোনো ধরনের দৃশ্যমান অগ্রগতি আনতে সক্ষম হননি ।
ভবিষ্যৎ ধাপ ও সম্ভাব্য ফলাফল:
ট্রাম্প—পরবর্তী বৈঠকে জেলেনস্কি, পুতিন ও নিজেকে তিন-মুখী আলোচনায় যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন; যদিও পুতিন মস্কোতে আয়োজন করতে চান, যা নিরাপত্তার কারণে জেলেনস্কি অংশ নিতে পারবে না ।
সামরিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে; বৈঠকের রাতেই রাশিয়া থেকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর পাওয়া যায়, যেটি বৈঠকের তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটকে শক্তিশালী করে ।
ট্রাম্প পরবর্তী পর্যায়ে কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে ইউক্রেনকে মস্কো-ও ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত হতে উত্সাহিত করেছেন; যদিও ইউক্রেন এবং পশ্চিমা শক্তিগণের প্রাথমিক আবেদনে রাশিয়ার শর্তে আপস না করার আহ্বান রয়েছে ।
সামগ্রিকভাবে, এই বৈঠকটিতে দৃশ্যমান কোনো যুদ্ধ বিরতি বা শান্তি চুক্তি হয়নি। বরং, এটি কূটনৈতিক ও প্রতীকী অঙ্কে পুতিনের পক্ষে কিছু নতুন সুযোগ খুলে দিয়েছে—যখন ট্রাম্প শান্তির ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন ।
এই বৈঠকটি ছিল একদিকে বাস্তব ফলাফলহীন দর্শন। ট্রাম্প যেভাবে বৈঠককে সফল বললেন, বাস্তবে সেখানে কোনো যুদ্ধবিরতি, শান্তি চুক্তি বা উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থাপনার চুক্তি হয়নি। তবে পুতিনের আন্তর্জাতিক মান-সম্পদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটেছে, এবং তিনি বেশ কিছু কূটনৈতিক সুবিধা নিয়ে ফিরে গেছেন। ফলে, এটি ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগ হিসাবে নয়, বরং পুতিনের প্রতীকী কূটনৈতিক জয় বলে মনে হচ্ছে।
Comments