মিয়ানমারে জান্তার নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা আরাকান আর্মির

২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের সময় জারি করা জরুরি অবস্থা গত জুলাইয়ের শেষের দিকে প্রত্যাহার করে সামরিক জান্তা সরকার। ওই সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী ডিসেম্বরে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সোমবার (১১ আগস্ট) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে।
আরাকান আর্মি ছাড়াও অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত গণতন্ত্রকামী আইনপ্রণেতা এবং দেশটির জান্তাবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ মিয়ানমারে জান্তার এই নির্বাচনকে 'প্রতারণা' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। জান্তার শাসন টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
২০২১ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জেনারেলদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে। গোষ্ঠীটি বর্তমানে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ রেখেছে।
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত পর্যবেক্ষণ করে আসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৪টি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গোষ্ঠীটির মুখপাত্র খাইং থু খা বলেছেন, জনসমর্থনবিহীন নির্বাচন জনগণের কোনো উপকারে আসবে না, বরং তাদের আরও বিভ্রান্ত করবে।
তিনি বলেন, সামরিক জান্তা পরিষদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তা হতে দেওয়া হবে না। আর এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, রাখাইনবাসী নির্বাচনে আগ্রহী নন।
জান্তা সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিয়ানমারের ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার অন্তত ২৫ লাখ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইনে বসবাস করেন। প্রাথমিকভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর থাকলেও ২০২৩ সালের শেষের দিকে সেটি ভেস্তে যায়।
পরে দেশটির অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে অংশ নেয়। দেশটির সশস্ত্র এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে একের পর এক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারায় সামরিক বাহিনী।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। পাশাপাশি উপকূলীয় এই রাজ্যকে দেশের বাকি অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে সেখানে অঘোষিত অবরোধ আরোপ করে।
Comments