নদী ভাঙ্গণ আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে চায় চাঁদপুরের পুরানবাজারবাসী

একের পর এক মেঘনার করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে এবার নদী ভাঙ্গণ আতঙ্ক কাটিয়ে উঠার বাস্তবিকতা দেখতে চায় চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারবাসী। যদিও মানুষের ভিটেমাটিসহ আবাসস্থলটুকু টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরানবাজারের হরিসভা এলাকায় গেলে স্থানীয়রা তাদের ঘুমহীন রাতের হতাশা এ প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন।
বিষু বনিক নামের হরিসভা এলাকার একজন জানান, আমাদের বাড়ীঘর যা ছিলো নদীভাঙ্গণের কারনে এখন সেই স্থান দিয়ে নদী বয়ে তার ওপর বড় বড় জাহাজ চলছে। চোখের সামনেই সব দিনের পর দিন যেনো নদী ভাঙ্গণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখান দিয়ে যে রাস্তটি দেখছেন তারও অর্ধেকটা নদীতে গেলো ভাঙ্গণে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে এখন আমাদের কয়েকটি ঘর রয়েছে। তাও রাতে ঘুমাতে পারিনা চিন্তায়। কখন আবার নদীতে তলিয়ে যায়।

পুরানবাজারের ব্যবসায়ী গোপাল সাহা বলেন, মেরামত বা সংস্কার নয় বরং টেকসই মজবুত স্থায়ী শহর রক্ষা বাঁধ প্রয়োজন আমাদের। তাহলেই এখানকার মানুষের বাড়ী ঘর,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,মন্দির মসজিদ, ইমারতসহ সাড়ে ৫ লক্ষাধিক মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। রামঠাকুর দোল মন্দির ও ট্রাকঘাটটির দিকে বিশেষ নজর দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে নতুন বাজার ও পুরানবাজার এলাকায় প্রায় ৩.৩৬ কিলোমিটার এলাকায় চলছে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ। যেখানে একযোগে ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮২৭ কোটি টাকার কাজ চলমান রেখেছে। তবে বর্তমানে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিবৃষ্টির কারনে বাঁধের টিলাবাড়ি, যমুনা ঘাট, হরিসভা, রোনাগোয়াল ও নতুনবাজারের ডাকাতিয়া নদীর পাড়সহ ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসহ বাঁধের সর্বমোট ১০৯ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়নবোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুরের নতুন বাজার, পুরান বাজার শহর রক্ষা বাঁধের দৈর্ঘ্য ৩৩৬০ মিটার। যা ১৯৭২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে মোট ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণে কাজ করেছে সরকার। বর্তমানে ৮২৭ কোটি টাকার বাঁধ পুনর্বাসন কাজটি ৬শ' কোটি টাকায় কন্টাকে এগিয়ে চলছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসে শহর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়ে এর ১৮% কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে পুরো কাজ ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অতি বৃষ্টির কারনে কাজ বন্ধ তবে ব্লক ম্যানুফেকচারিং চলছে।
তিনি বলেন, ডাকাতিয়া নদীর ৩.১৮ কিলোমিটার এলাকায় সদরের ইসলামপুর গাছতলা, রগুনাথপুর, গুনরাজদী, মৈশাদীসহ বেশ কিছু স্থান চিহ্নিত করেও ভাঙ্গণ ঠেকাতে কিছু কাজ করা হয়েছে। আশা করছি সব ঠিকঠাক মতো কাজ সম্পন্ন করা গেলে মানুষের ভাঙ্গণ আতঙ্ক ও চোখে মুখে হতাশা কেটে যাবে।
Comments