সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচিতে সরব উপস্থিতি

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ ময়দানে দলীয়ভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রচার প্রচারণায় সরব। কোন কোন দল প্রকাশ্যে দলীয় কর্মকান্ডের পাশপাশি নির্বাচনী কাজ শুরু করলেও আর কোন কোন দল গোপনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিবাচনী কাজ শুরু করেছে বলে দলীয়সূত্রে জানায়।
বিএনপির দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এরমধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ও এমপি প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল নোমানের পুত্র ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ আল নেমান, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি ও মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পুত্র বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ইসরাফিল মাহমুদ খসরু, মহানগর জামায়াত ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক দলীয় এককপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামশুল ইসলাম হেলালী।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মহাসচিব অধ্যক্ষ আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর, সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মুজিবুল হক শুক্কুর ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ হাসমত আলী তাহেরী।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় এককপ্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জন্নাতুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি, জাতীয় পাটির চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সম্পাদক শামশুল আলম খান বিকম, ধর্ম মন্ত্রনালয়ের হিন্দু ধর্মে কল্যাণ ট্রাস্টি দিপক কুমার পালিত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ আলমগীর ইসলাম বঈদী, এবি পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ মুক্তিযোদ্ধা বিয়ষক সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার অলী চৌধুরী, বাংলাদেশের সামাজতান্ত্রিক দল বাসদ চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক মহিন উদ্দীন।
বিএনপি দলীয় নারী প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালীর হাতিয়ার সাবেক এমপির নাতনী চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদিকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি পরিদর্শক আঁখি সুলতানা, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনির নামও ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুরুল আলম মঞ্জুর নামও শুনা যাচ্ছে, মনজুরুল আলমের পরিবারের সাথে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে সমঝোতা করে বিএনপির রাজনীতিতে স্বক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও পারিবারিকসূত্রে জানায়।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক আঁখি সুলতানা বলেন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় রাজনীতি আমাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে আমার পিতা সরকারি চাকুরী সুবাধে চট্টগ্রামে না আসলে আমরা নোয়াখালীতে বিএনপির রাজনীতি নেতৃত্ব দিতাম, প্রত্যেক দলের মধ্যে ৩০% নারী কোটা বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামে নারীপ্রার্থী হিসেবে আমরা দাবিদার, দলের জন্য পুরো জীবনটা বির্সজন দিয়েছি, বিএনপির রাজনীতি করতে হিয়ে অনেক মামলা হামলা জেল, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তবে চট্টগ্রামের বিএনপির অভিভাবক আব্দুল্লাহ আল নেমানের পরিবারকে এ আসনে মনোনয়ন দিবে সেটা অনেকটা নিশ্চিত।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জন্নাতুল ইসলাম বলেন, আমি চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রতিদিন কোন না কোন জায়গায় সামাজিক ও এবং দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছি আমি নির্বাচন করার বিষয়টি দলীয় কর্মী এবং ভোটারদের অনেক আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমার সংসদীয় এলাকায় গুছানো একটি সংগঠন ভোটারদের কাছে দলীয় বার্তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের হিন্দু ধর্মের কল্যাণ ট্রাস্টের টাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য দিপক কুমাল পালিত বলেন, আমরা হিন্দু সংগঠনগুলো নিয়ে একটা মোর্চা গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ফ্রন্ট নামের একটি সংগঠনের সারা দেশে সরকারের সাথে আলাপা আলোচনা করে আমরা ৩শ আসনে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিযেছি। চট্টগ্রাম-১০ এবং চট্টগ্রাম-১২ আসনে মাঠে ঘাট আমরা গুছিয়ে ফেলছি। উক্ত আসান থেকে আমি আগেও নির্বাচন করেছি।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক এ এম মঈন উদ্দীন চৌধুরী হালিম বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫ আগস্টের পর থেকে সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং আসন ভিত্তিক প্রার্থীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের বিষয়ে জোরদার করার নির্দেশনা এবং ভোটারদেও মন জয় করার জন্য মাঠে ময়দানে নেতা কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী বলেন, আমি ২০১৮ সালেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কর্মীর স্বপ্ন থাকে বড় রাজনীতিবিদ হবে এমপি হবে, তবে আমার ব্যক্তিগত কোন চাওয়া নেই দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে আমাকে মনোনয়ন দিবে মনোনয়ন সবাই চাইতে পারে নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে ময়দানে কর্মকান্ড জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আল নোমান ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের হালিশহর থানা, পাহাড়তলী থানা, পাঁচলাইশ থানা, ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ড এবং ৪২ নম্বর পূর্ব নাসিরাবাদ ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় গংসংযোগ করেছে বলে নেতা কর্মীরা জানান।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-১০ আসনে মোট ভোটার জন ৪,৮৯,৪৭৮ (ডিসেম্বর ২০২৩) এর তথ্যমতে এরমধ্যে পুরুষ ভোটার: ২,৫৬,৪৭৬ জন। নারী ভোটার: ২,৪৫,৩৭৯ জন, হিজড়া ভোটার ২৬ জন।
চট্টগ্রাম-১০ আসনটি খুলশী, পাহাড়তলী, পাঁচলাইশ, হালিশহর ও ডবলমুরিং নিয়ে গঠিত ছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এটি ছিল চট্টগ্রামের অন্যতম বড় নির্বাচনি আসন। তবে তখন এটি চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসন হিসাবে পরিচিতি ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটির সীমানা পুণর্নিধারণ করে চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ দুটি আসনে ভাগ করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন পুণর্বিন্যাস করা হয়। বর্তমানে এটি খুলশী-হালিশহর আসন হিসাবে পরিচিত। এই আসনে অতীতে জাতীয় নেতারা নির্বাচন করেছেন। এ কারণে এর গুরুত্বও বেশি।
Comments