ব্যক্তিজীবন আর অফিসের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা জরুরি কেন?

একদিকে ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সামাজিকতা; অন্যদিকে অফিসের কাজ, প্রমোশন, ক্যারিয়ার। এ দুটির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা বর্তমানে সত্যি কঠিন হয়ে গেছে। অথচ এ দুটির ভারসাম্যে রক্ষা জরুরি বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা।
সকালের চায়ের কাপ হাতে যখন ল্যাপটপ খুলে বসেন, তখনই শুরু হয় এক অদৃশ্য দৌড়। ই–মেইল, মিটিং, টাস্ক, মেসেজ— একটার পর একটা। এরপর কখন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, তার খেয়াল থাকে না। মনে হয় জীবনটা ঘুরছে কাজকে কেন্দ্র করে। যেন অফিসই জীবন আর জীবনই অফিস। মাঝখানে কোনো পার্থক্য নেই! এ কারণে অনেকেই বিষণ্ন হয়ে যাচ্ছেন। ভুগছেন বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায়। তার পরেও 'চাকরির নামেই জীবন'।
বিভিন্ন ধরনের গবেষণা জানাচ্ছে, যাঁরা কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমানা টানতে পারেন, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে আরও সফল হন এবং মানসিকভাবেও অনেক বেশি স্থিতিশীল থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ সেটা পারেন না। ফলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে জীবনে। তবে সমস্যাটা হলো, যে ভারসাম্যের কথা বলা হয়, তা গড়ে তোলার কোনো নির্দিষ্ট ছক নেই। কেউ সময় মেনে চলে শান্তি পান, কেউ আবার নমনীয়তা পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে করনীয় হচ্ছে:
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকুন
আমাদের যেন অফিস শেষ হলেও কাজ শেষ হয় না। বিশেষ করে যেদিন থেকে আমাদের হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট এসেছে। অফিস শেষ হলেও বিভিন্ন গ্রুপের বা সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন আসতেই থাকে। আবার এমনও হয়, অফিসের বাইরে অফিসের কাজেই সক্রিয় থাকেন অনেকে। এটাও একধরনের মানসিক যন্ত্রণা দেয়। তাই চেষ্টা করুন, অফিসকে অফিসের গণ্ডিতে রাখতে। তার যাবতীয় যোগাযোগ সেখানেই করুন। বাসায় ফিরে অফিসের মোবাইল আর ই-মেইল বা সামাজিক মিডিয়া যোগাযোগের গ্রুপগুলো থেকে দূরে থাকুন।
জীবনে শুধু অফিস নয়, নিজের সময়, নিজের ভালো লাগাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়িতে আলাদা কাজের জায়গা রাখুন
অনেকেই বাড়িতে একটা নির্দিষ্ট জায়গা রাখেন কেবল কাজের জন্য। সেই জায়গার বাইরে ই-মেইলও চেক করেন না। এ রকম একটা মানসিক রুটিন তৈরি করলে কাজ আর ব্যক্তিগত সময় আলাদা রাখা সহজ হয়। কারণ আপনি যেভাবে নিয়ম গড়বেন, সেভাবেই চালাতে পারবেন।
কাজের সময় নিয়ে নমনীয় থাকুন
সব সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা কাজ করতেই হবে— এই চাপটা অনেক সময় কাজের থেকে বেশি ক্লান্ত করে তোলে। কেউ কেউ নিজের কাজের সময়টাকে একটু ঢিলে দেন। দিনের মাঝখানে যদি মনে হয় একটু হাঁটতে ইচ্ছা করছে বা জরুরি একটা কাজ সেরে নিতে হবে, তবে সেটা করে নিয়ে পরে সেই সময়টুকু পুষিয়ে দিন অন্য সময়। এতে মন আরও ফুরফুরে থাকে। এই ছন্দে কাজ করার একটা বড় সুবিধা হলো, এটা মানসিক চাপ তৈরি করে না।
বিরতি নেওয়া জরুরি
টানা কাজ করলে শুধু ক্লান্তিই বাড়ে না, ভুলও বাড়ে। টানা কাজ করতে করতে মাথা ভার হয়ে আসে, ঝিমিয়ে পড়ে। তখন ১০ মিনিটের হাঁটা কিংবা একটু চুপচাপ বসে থাকা বা ছোট ছোট বিরতি হয়ে ওঠে বিশ্রামের টনিক। অবশ্যই দুপুরের খাবারের জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক রাখুন। সেটিও বিশ্রাম দেয়। এ ছাড়া কাজের ফাঁকে নিজের জন্য একটু সময় রাখুন। এ সময় বই পড়া, গান শোনা বা এক কাপ চা পান করতে পারেন।
'ছুটি' মানে ছুটি
ছুটির দিনেও অনেকে কাঁধে করে অফিসের কাজ নিয়ে আসেন। আবার কারও এটা অভ্যাসে পরিণত হয়। ছুটির দিন সকালে উঠেও ই-মেইল দেখা বা অফিসের কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ছুটির পর যেন আবার অফিস শুরু করতে গিয়ে চাপ না বাড়ে, তাই অনেকে ছোট কাজগুলো আগেই সেরে রাখেন। এসব অভ্যাসে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই ছুটির দিন মানে ছুটি কাটান। পরিবার বা বন্ধুদের সময় দিন। এই কাজগুলো আপনাকে পরদিন অফিস করতে সহায়তা করবে।
সব নিয়ম সবার জন্য কাজ করে না। কেউ সময় মেনে কাজ করে ভালো থাকেন, কেউ আবার ঢিলেঢালা রুটিনে শান্তি পান। আপনি নিজেকে সবচেয়ে ভালো চেনেন। তাই কিছু উপায় চেষ্টা করে দেখুন, কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে। মনে রাখবেন, আপনার জীবনে শুধু অফিস নয়, নিজের সময়, নিজের ভালো লাগাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: হেলথ লাইন
Comments