শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদে ভাঙন, হুমকিতে ৯৭ কোটি টাকার সেতু

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলা আড়িয়াল খাঁ নদ যেন আজ আর শুধুই এক নদীর নাম নয়—এ যেন এক দুরন্ত বালকের মতো সবকিছু ভেঙে-চুরে আপন খেয়ালে চলা এক জলরাশি। এই খেয়ালি স্রোতের তাণ্ডবে আজ হুমকির মুখে পড়েছে কোটি টাকার এক স্বপ্ন—লিটন চৌধুরী সেতু। নদী শাসন বাঁধ না থাকায় বর্ষার শুরুতেই এমন ধস নামায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
শিবচরের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান (উৎরাইল-শিবচর) সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদের উপর নির্মিত নয়াবাজার পাড়ের দক্ষিণ পাশে এই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেতুর একটি পিলারের কাছাকাছি বেশ কিছু জায়গা ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলা এলজিইডি থেকে জানা গেছে, ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে 'লিটন চৌধুরী' সেতুটি ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এ পথ দিয়ে উপজেলা সদরের সাথে দত্তপাড়া, শিরুয়াইল, নিলখী ইউনিয়নের বাসিন্দারা চলাচল করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আঃ মান্নান জানান, এই সেতুটি শিবচরের পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেয়। সেতুটি শুধু এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যাওয়ার পথ নয়, এটি হয়ে উঠে আশা, অগ্রগতি আর উন্নয়নের প্রতীক। কিন্তু এখন সেই প্রতীকই তীব্র স্রোতের কূলে দাঁড়িয়ে—ভয় আর উদ্বেগের নামান্তর।
স্থানীয়রা জানান, আড়িয়াল খাঁ নদ এ বছর বর্ষার শুরু যেন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। নদীর ভাঙন সেতুর গোড়ার মাটি কেড়ে নিচ্ছে প্রতিদিন। এখনই যদি এর প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়,তাহলে যেকোনো ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এক প্রবীণ শিক্ষক চোখের কোণে জল এনে বলেন, "দত্তপাড়া, শিরুয়াইল ও নিলখী ইউনিয়ন সহ পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন এই সেতুর জন্য আমরা কত অপেক্ষা করেছি! এখন যদি আড়িয়াল খাঁ নদ তা গিলে ফেলে, তবে আমাদের বেঁচে থাকাটাই একরকম যুদ্ধ হবে।"তাই একে রক্ষা করার জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
সেতুর কাছে নদী ভাঙনের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম।
মাদারীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল কীর্তনীয়া বলেন, দ্রুত সেতুর বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
Comments