শুভ জন্মদিন ৬৩ বছরের ‘টগবগে যুবক’

বয়সটা হয়ে গেল ৬৩ বছর, এই বয়সে এসেও গ্র্যাভিটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দম বন্ধ করা স্ট্যান্তের মাধ্যমে হলিউড ইন্ডাস্ট্রি কাঁপিয়ে যাচ্ছেন 'টগবগে যুবক' টম ক্রুজ। বিশ্বব্যাপী আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পাওয়া হলিউড তারকাদের অন্যতম একজন তিনি। আজ তাঁর জন্মদিন।
দীর্ঘ চার দশকের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন বহু ব্যবসাসফল সিনেমায়। টম ক্রুজ বিশ্ব সিনেমায় এমন এক নাম, যে নামের সঙ্গেই মিশে আছে ধুন্ধুমার অ্যাকশন। কখনও শততলা বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়া, কখনও উড়োজাহাজের বাইরে ঝুলে থাকা, কখনও পাহাড়ের ওপর থেকে বাইক নিয়ে লাফিয়ে পড়া, কিংবা ফাইটার প্লেনে মাঝ আকাশে দুরন্ত পদচারণা। বড় পর্দায় অসম্ভবকে সম্ভব করাই যেন তার কাজ।
বেশিরভাগ সময়ে অ্যাকশন অবতারে ধরা দেওয়া রোমান্টিক চেহারার টমের অভিনয় শুরু 'আইটি' নাটক দিয়ে। ১৯৮১ সালে টম ক্রুজ 'এন্ডলেস লাভ অ্যান্ড ট্যাপস' ছবিতে সহকারী চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে 'অল দ্য রাইট মুভস' এবং 'রিস্কি বিজনেস' ছবির মাধ্যমে তার সাফল্যগাথা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো একক কেন্দ্রীয় চরিত্রে আসেন 'দ্য লিজেন্ড' সিনেমার মাধ্যমে।
তার পরের বছরই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেই সময়টির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন দীর্ঘদিন, পরিশ্রম করেছেন নিরলস। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় টম অভিনীত বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা 'টপ গান'। যেটি টম ক্রুজকে পরিণত করে সুপারস্টারে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার অভিনীত 'মিশন ইমপসিবল' ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমাগুলো তাকে বিশ্বব্যাপী শুধু জনপ্রিইয় করেনি, নিয়ে গেছে অনন্ একয উচ্চতায়। সম্প্রতি তার মিশন ইমপসিবল সিরিজের শেষ কিস্তি 'দ্য ফাইনাল রেকনিং' পুরো বিশ্বে ধুন্ধুমার ব্যবসা করেছে।
টম ক্রুজের দুর্ধর্ষ অভিনয় দেখে আবেগি কিংবা উদ্বেলিত হন না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। তিনি রোমান্টিক চেহারার অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও এক ভয়ংকর এজেন্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ আর অ্যাকশন দৃশ্য হার মানায় ফ্যান্টাসিকেও। অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাঁপিয়ে দিয়েছেন সিনেমার পর্দা। টম ক্রুজ বড় পর্দায় উচ্ছল, উদ্যম আর সাড়া জাগানো এক স্বপ্নপুরুষ। তার অ্যাকশন দৃশ্যের সৃজন এতই নান্দনিক যে, পর্দায় সেগুলো দেখে মনের গভীরে তার মতো হওয়ার ইচ্ছা জাগেনি এমন তরুণও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
নীলাভ ধূসর চোখ, কখনও কপালজুড়ে উড়তে থাকা ঝাঁকড়া চুল আর মায়াবী চেহারার টম ক্রুজ হলিউডের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তায় মানুষের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তার অ্যাকশন ছবিগুলোর বেশিরভাগ দুঃসাহসী স্ট্যান্ট তিনি নিজেই করেন। এ জন্য তাকে বহুবার গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। তবু সিনেমার পর্দায় অ্যাকশন দৃশ্যগুলোয় বাস্তবতা ছোঁয়া দিতে তিনি সব সময়ই এমনটা করেছেন, এটাই তার অতুলনীয় শিল্পীগুণ।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, একের পর এক এতগুলো বাণিজ্যিক সিনেমা উপহার দিলেও টম ক্রুজের ঝুলিতে আজ পর্যন্ত অস্কার জোটেনি। তবে তিনটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। 'পিপল ম্যাগাজিন' তাকে বিশ্বের সুদর্শন মানুষের তালিকার শীর্ষ দিকেই রেখেছে। এ ছাড়া 'ফোর্বস' ও 'প্রিমিয়ার' ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী তারকা হিসেবে আখ্যায়িত করে।
সাংসারিক জীবনে টম ক্রুজকে নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। তিনি প্রথম বিয়ে করেন মিমি রজারসকে। সেই সম্পর্ক টেকে মাত্র দুই বছর। এরপর বিয়ে করেন নিকোলে কিডম্যানকে। ২০০১ সালে সেটিও বিচ্ছেদ হয়। ২০০৬ সালে কেটি হোমসকে বিয়ে করেন, সেটিও ছয় বছর পর ভেঙে যায়। নানা পারিবারিক প্রতিকূলতা থাকলেও সিনেমা অঙ্গনে কখনোই তার পদচারণা থেমে থাকেনি। একের পর এক শিহরণ জাগানো সিনেমা দিয়ে গেছেন সিনেপ্রেমীদের।
এভাবেই চলতে থাকুক হলিউডের এই মহাতারকার পথচলা। জন্মদিনে এই কামনা তাঁর সকল ভক্তদের। শুভ জন্মদিন প্রিয় টম ক্রুজ!
Comments