কোমরের মাপ থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির খবর জানবেন যেভাবে

অনেক দিন ধরেই আমরা জেনে আসছি, অতিরিক্ত ওজনই হৃদরোগ বা হার্ট ফেইলিওরের প্রধান কারণ। ফলে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন ওজন কমানোয় মনোযোগ দেন বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শুধু ওজন নয়, বরং কোমরের মাপই অনেক বেশি নির্ভরযোগ্যভাবে বলে দিতে পারে—আপনি হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন কি না।
এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি পরিচালনা করেছে সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির (ESC) বার্ষিক সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, শরীরে চর্বি কোথায় জমছে—তা ওজনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হৃদরোগ শনাক্তে। বিশেষ করে কোমরে জমে থাকা চর্বি হার্ট ফেইলিওরের পূর্বাভাস দিতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার ফলাফল: এই গবেষণা চালানো হয়েছে মালমো প্রিভেন্টিভ প্রজেক্ট-এ অংশ নেয়া ১ হাজার ৭৯২ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর, যাদের বয়স ছিল ৪৫ থেকে ৭৩ বছরের মধ্যে। প্রায় ১৩ বছর ধরে গবেষকরা তাদের শরীরের বিভিন্ন উপাত্ত, যেমন উচ্চতা, ওজন, কোমরের মাপ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের ওজন স্বাভাবিক, কিন্তু কোমরের মাপ তাদের উচ্চতার অর্ধেকের চেয়েও বেশি। এদের মধ্যে হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি ছিল উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। অর্থাৎ কারও ওজন স্বাভাবিক হলেও যদি কোমরের চর্বি বেশি হয়, তাহলে সেটি হৃদরোগের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
কেন বিএমএই যথেষ্ট নয়?
বডি মেস ইনডেক্স (BMI) হলো শরীরের ওজন ও উচ্চতার অনুপাতের ভিত্তিতে স্থূলতা নির্ধারণের একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু গবেষণার প্রধান উপস্থাপক ডা. জুজিচ মনে করেন, বিএমএইতে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার ভাষায়, "বিএমএই একজন মানুষের লিঙ্গ, বয়স বা জাতিগত পার্থক্য বিবেচনা করে না। এটি শুধু ওজন আর উচ্চতার সংখ্যা হিসেব করে দেখে। অথচ এটি বলে না শরীরের কোথায় চর্বি জমেছে, যা হৃদরোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।"
গবেষকদের মতামত: গবেষক ডা. জন মলভিন বলেন, "আপনার কোমরের মাপ যদি আপনার উচ্চতার অর্ধেকের বেশি হয়, তাহলে এটা একটি গভীর সতর্ক সংকেত। হার্ট ফেইলিওর বা অন্যান্য হৃদরোগের আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। সময় থাকতে এ বিষয়ে সচেতন না হলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, "চিকিৎসকদের উচিত এখন থেকে রক্তচাপ পরীক্ষার সময় রোগীর কোমরের মাপও নির্ণয় করা। কারণ অনেকেই পেটের মেদকে তেমন গুরুত্ব দেন না, অথচ সেটাই হয়তো তাঁর হৃদযন্ত্রের সবচেয়ে বড় হুমকি।"
কী করা উচিত?
গবেষকেরা বলছেন, এখন সময় এসেছে ওজন কমানোকে একমাত্র লক্ষ্য না রেখে শরীরের চর্বি কোথায় জমছে, সেদিকেও নজর দেওয়ার। নিয়মিত হাঁটা, শরীরচর্চা, ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া, চিনিযুক্ত ও তেলচর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পাশাপাশি প্রতি ছয় মাসে একবার নিজের কোমরের মাপ পরীক্ষা করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কোমরের মাপ যেন তার উচ্চতার ৫০ শতাংশের মধ্যে থাকে, সেটি নিশ্চিত করাই হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার একটি বড় পদক্ষেপ।
সাম্প্রতিক এই গবেষণাটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি বুঝিয়ে দিয়েছে, চেহারায় মোটা না দেখালেও কারও শরীরে অভ্যন্তরীণ চর্বি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। অতএব, শুধু ওজনের কাঁটা নয়, বরং ফিতেটাও হতে পারে আপনার হৃদযন্ত্রের ভবিষ্যৎ জানার চাবিকাঠি। এখনই যদি নিজের শরীর সম্পর্কে সতর্ক না হন, ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Comments