ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব কীসের ইঙ্গিত?

আমেরিকায় একটা কথা প্রচলিত আছে যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কারও সম্পর্ক ছয় মাসের বেশি টিকে না। ঠিক যেন তাই হলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সাথে তার নিবিড় বন্ধুত্ব দেখতে পাচ্ছিল বিশ্ববাসী। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ইলন মাস্ক সরকারি দায়িত্ব পালন করছিলেন ফ্রি স্টাইলে। অনেকে তাকে ডাকত 'ইলন ট্রাম্প' নামে। কিন্তু ছয় মাসের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে সেই সম্পর্কে চিড় ধরেছে।
টেসলা কর্তা ইলন মাস্ক ট্রাম্পের ব্যয় সংক্রান্ত বিল বাতিল করার ডাক দিতেই ফুঁসে ওঠে অকৃতজ্ঞ বলে বসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই মন্তব্য শুনেই এবার পাল্টা একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করে চলেছেন ধনকুবের মাস্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বার ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার সিংহভাগ কৃতিত্বই দাবি করে বসলেন ইলন মাস্ক। শুধু তাই নয়, কুখ্যাত কেস 'এপস্টাইন ফাইল'-এর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক থাকার কথা বললেন মাস্ক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নতুন আঘাত হানার ইঙ্গিত দিলেন টেসলা কর্তার উপর। আর্থিক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কথাও বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুধু তা-ই নয়, সরকারের থেকে যে ভর্তুকি পায় মাস্কের কোম্পানি টেসলা, তা-ও বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প।
সপ্তাহখানেক আগে ট্রাম্পের জনকল্যাণমূলক বিলকে জঘন্য পদক্ষেপ বলে চিহ্নিত করে প্রশাসনিক উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ধনকুবের মাস্ক। তার পর থেকেই দুই 'বন্ধু'র মধ্যে বাগ্যুদ্ধ চলছেই।
ইলন মাস্ক দাবি করেছেন, তার সমর্থন ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হেরে যেতেন। টেসলা কর্তার দাবি, সে সময়ে একটি আইন প্রণয়ন বিল নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ট্রাম্প। যে কোনও মুহূর্তে তখন পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারত। এই অবস্থায়, নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নিলে রিপাবলিকানদের পিছনে ফেলে সেনেটে ৫১-৪৯ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে অসুবিধা হতো না ডেমোক্র্যাটদের। মাস্কের কথা অনুযায়ী শুধুমাত্র তার জন্যই পরিস্থিতি বদলে যায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরোনো বিতর্কও উস্কে দিয়েছেন ইলন মাস্ক। কুখ্যাত যৌন কেলেঙ্কারি কেস 'এপস্টাইন ফাইল'-এর প্রসঙ্গ তুলে মাস্ক এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, 'সত্যিই বড় বোমা ফেলার সময় এসেছে: এপস্টাইনের ফাইলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম আছে। এটাই আসল কারণ যে কারণে এগুলো প্রকাশ করা হয়নি'।
এখানেই শেষ নয়, এক্স হ্যান্ডলে একের পর এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করে চলেছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক লড়াই এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মন্দার কারণ হবে। এরপরই এক্স হ্যান্ডলে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ইলন একটি ভোটাভুটির আয়োজন করেন। যার বিষয় ছিল, 'আমেরিকায় কি এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার সময় এসেছে যা জনতার ৮০ শতাংশ এর প্রতিনিধিত্ব করবে?' একটি পোস্টে উত্তরে, ট্রাম্পকে সরিয়ে জেডি ভান্সকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর বিষয়টিও সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে তাকে।
ট্রাম্প ও মাস্কের বন্ধুত্বের টানাপোড়েনে এখন কী হতে পারে, সেটা স্পষ্ট নয়। রিপাবলিকানদের মধ্যে মাস্ক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যা-ই হোক বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎ যে ভালো নয় বোঝা যাচ্ছে। তার মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকসহ মাস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেছেন, ইলনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিল করাই হবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাশ্রয় করা।
Comments