হাতি ও মানুষের সহবস্থানের জন্য যা করার দরকার তাই করা হবেঃ পরিবেশ উপদেষ্টা

বন ও পরিবেশ ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাতির জন্য অনুপযোগী গাছ যা আছে তা কাটতে হবে এবং হাতির উপযোগী বনায়ন করতে হবে। একাশি ও আকাশমণি গাছ কাটার উপযোগী হোক না হোক কেটে ফেলতে হবে। ইতোমধ্যে বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে এই দুই ধরনের গাছ লাগানো নিষিদ্ধ করেছে।
হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হলে তার হাঁটার যায়গা ও খাবার দিতে হবে। হাতি এবং মানুষের সহাবস্থানই সমস্যার সমাধান। এটা কি করে সমাধান করা যায় সে উদ্দেশ্যেই আজ আমরা এখানে এসেছি।
২৬ মে সোমবার সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর দাওধারা এলাকায় সম্ভাব্য পর্যটন কেন্দ্র দেখতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা কী করলে হাতি আর লোকালয়ে আসবে না সেটা আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। আমি দায়িত্ব নেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ১২টি হাতি মারা গেছে। এটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তার মানে এই সমস্যাটা বহুদিন ধরে। হাতি অবহেলিত হতে হতে চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যার ফলটা এখন আমরা দেখছি। হাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়নি, মানুষকে বলা হয়েছে। মানুষ এখন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে কি করলে আর হাতি আর আসবেনা, কি করা যাবে আর কি করা যাবেনা তা আমাদের ভাবতে হবে। ওইটা বুঝবার জন্যই আমি এসেছি।
হাতিকে তার আবাসে সমস্যা সৃষ্টির ব্যাপারে তিনি বলেন, সকাল বেলা হাতির সাথে সেলফি তুলবেন, হাতির দিকে আগুন ছুঁড়ে মারবেন, বল্লম দিয়ে খুচাবেন। এসময় সে হয়তো ভয়ে চলে যায় কিন্তু পরে রাগ বা ক্ষোভে ক্ষতি হয়। এটা কোনভাবেই কাম্য নয় যে মানুষ মারা যাবে হাতি মারা যাবে। এখানে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার নেই। আসলে কিছু ক্ষতি আছে যার ক্ষতিপূরণ নেই। যেমন হাতি মরলেও ক্ষতিপূরণ নেই, মানুষ মরলেও ক্ষতিপূরণ নেই। হাতি এবং মানুষের সহবস্থান কিভাবে করা যায় সেটাই করবো।
এছাড়াও বনের জমি অবৈধভাবে দখল করে বাড়িঘর তৈরির ব্যাপারে বলেন, কারো যদি আশ্রয় নেয়ার কোথাও কোন জায়গা না থাকে তাহলে সরকার তার জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থা করবে। সেতো আমার বনবিভাগে এসে থাকতে পারবে না। এটাতো হতে পারেনা। এখন বনভূমিতে যারা থাকছে এদের বাড়িঘর তৈরির জন্য দেখবেন রাজনৈতিক আশ্রয় সম্পৃক্ত থাকে। তারা ওখান থেকে একটা ভাড়া নেন। আবার যখন উচ্ছেদ করা হয় তখন তারাই বলে দরিদ্রদের সব গেলো, সব গেলো এমন কথা হয়। যারা এই কথা বলে তারা এদের জায়গা দিলেই তো পারে। এছাড়াও বনভূমিতে আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরির কোন সুযোগ নেই। বনভূমিতে দরিদ্র মানুষ বলে তাকে বাসস্থান করে দেয়া হবে এর তো কোন সুযোগ নেই। এর জন্য সরকারের খাশ জমি রয়েছে। তবে সব জায়গায় একসাথে উচ্ছেদ করাও সম্ভব নয় জনবলের অভাবে। ডিসি ও বনবিভাগের দ্বন্দ্ব নিরসনে আসতে হবে। সরকারকে আলাদা আলাদা করার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, নালিতাবাড়ীর দাওধারা এলাকায় বনের ভেতরের বিস্তীর্ণ এই জায়গাজুড়ে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। বনের ভেতরের ২২৩ একর জায়গা রয়েছে ডিসি ল্যান্ড বা খাস জমি। যার ৩২ একর জমি সংরক্ষিত পাথর মহাল হিসেবেও রয়েছে।
কাজ শুরুর পর বন্য হাতি সংরক্ষণ, সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধি ও বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখার সুপারিশে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনে আপত্তি জানায় স্থানীয় বন বিভাগ। এতে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে মুখোমুখি স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগ।
এদিকে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে ও বিপক্ষে স্থানীয়রা উপদেষ্টার গাড়ি বহর আটকে বিক্ষোভ করেন। পরে গাড়ি বহরের সাথে থাকা সাংবাদিকদের উপর হামলা করে তারা। এতে আহত হয় সময় সংবাদের চিত্র সাংবাদিক বাবু চক্রবর্তী, এখন টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি জাহিদুল খান সৌরভ, বাংলা টিভির সাংবাদিক নাঈম ইসলাম, বৈশাখী টিভির বিপ্লব দে কেটু, বাংলাদেশের খবরের শাহরিয়ার শাকিরসহ ছয় জন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
Comments