গাজা ইস্যুতে প্রায় সকল মিত্রকে হারিয়ে ফেলছেন নেতানিয়াহু: রিপোর্ট

গাজায় অবিরাম হামলা চালানো এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের অনেক ঘনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মিত্র বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। রোববার (২৬ মে) মার্কিন পোর্টাল অ্যাক্সিওস এ তথ্য জানিয়েছে।
অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নেতানিয়াহুর অভূতপূর্ব 'আন্তর্জাতিক বৈধতা' ছিল। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে সমর্থন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর এখন পরিস্থিতি 'কূটনৈতিক সুনামিতে' এসে দাঁড়িয়েছে।
অ্যাক্সিওস উল্লেখ করেছে, গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি বাতিল করে গাজায় খাদ্য, পানি এবং ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর নেতানিয়াহু গত দুই মাসে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরেও অনেক বন্ধুকে হারিয়েছেন। এই মাসের শুরুতে চাপ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়, যখন নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্ত করে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তিতে রাজি হওয়ার পরিবর্তে গাজা পুনরায় দখল এবং খালি করার জন্য একটি অভিযান শুরু করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার শীর্ষ সহযোগীরা নেতানিয়াহুকে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার উচিত যুদ্ধ বন্ধ করে সাহায্যের অনুমতি দেওয়া। যদিও ট্রাম্প বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার উদ্বেগ গোপন রেখেছেন। তবে বেশ কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার গত ১৯ মে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নেতানিয়াহু সরকার যখন এই জঘন্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা চুপ করে থাকব না। যদি ইসরায়েল নতুন করে সামরিক আক্রমণ বন্ধ না করে এবং মানবিক সাহায্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়, তাহলে আমরা প্রতিক্রিয়ায় আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেব।
এরপর নেতানিয়াহু ক্রোধের সাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি ভিডিও বিবৃতি দেন। যেখানে তিন ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে 'হামাসের ইচ্ছামত কাজ' করার ভিত্তিহীন অভিযোগ আনেন। নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন, প্রধানমন্ত্রী কার্নি এবং প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে বলছি: যখন গণহত্যাকারী, ধর্ষক, শিশু হত্যাকারী এবং অপহরণকারীরা আপনাকে ধন্যবাদ জানায়, তখন আপনি ন্যায়বিচারের ভুল দিকে থাকেন। আপনি মানবতার ভুল দিকে থাকেন এবং আপনি ইতিহাসের ভুল দিকে থাকেন।'
এরপর বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য ঘোষণা করেছে, তারা ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করছে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংস হামলায় জড়িত ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
দুই রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আগামী মাসে ফ্রান্স সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সম্মেলন আয়োজন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্পেন ইতোমধ্যেই গত বছর নরওয়ে এবং আয়ারল্যান্ডের সাথে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গত সপ্তাহে ইসরায়েলকে 'গণহত্যাকারী রাষ্ট্র' হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি ইসরায়েলকে ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার ইইউ'র ২৭ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ১৭ জন ইসরায়েলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র নেদারল্যান্ডসের আনা একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। এই প্রস্তাবে ইসরায়েলের সাথে ইইউ-এর বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, নেতানিয়াহু এবং তার প্রশাসন ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ এনেছে।
Comments