সব বিনিয়োগ সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার পরিকল্পনা সরকারের

দেশে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য কেন্দ্রীয় 'ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন এজেন্সি (আইপিএ)' গঠনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এবার তা বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গভর্নিং বোর্ডের তৃতীয় সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিডার গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাগুলো একীভূতকরণের বিষয়টি বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই পরবর্তী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় বিডা ছাড়াও আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি অথরিটি)।
এসব সংস্থা শিল্পের জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়। কোনো বিনিয়োগকারীকে প্লট নিতে হলে আলাদা আলাদা সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হন—বেজা কী, বেপজা কী, হাইটেক পার্ক কী, তাদের কাজই বা কী—এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে বেগ পেতে হয় তাদের।
বিডা সূত্র জানায়, এ কারণেই একটি মাস্টার আইপিএ গঠনের প্রস্তাব এসেছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ওয়ান-স্টপ সলুশন সেন্টার বা একক সমাধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।
একই দিন রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে বিডা'র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, "আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে সব সংস্থাকে একত্রিত করা যায়। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। কমিটি সুপারিশ করবে কীভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যাবে এবং কাঠামো কেমন হবে।"
বর্তমানে বিডা ও বেজা—দুই সংস্থারই নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি বলেন, "প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথকভাবে কাজ করায় সার্বিক বিনিয়োগ কার্যক্রমে সমন্বয় বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই একীভূতকরণ সময়োপযোগী।"
তবে সভায় সংস্থাগুলো একীভূতকরণের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উঠে আসে। অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা বিস্তারিত আলোচনার পর কমিটির মাধ্যমে প্রতিবেদন দেওয়ার পক্ষে মত দেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এটা হবে একটি মেগা অথরিটি। কিন্তু এর প্রধান যদি ভুল ব্যক্তি হন, তাহলে সেটি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।"
এদিকে, গত সপ্তাহে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর সঙ্গে একটি বৈঠক করে বিডা। সেখানে জাইকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, 'একটি একক আইপিএ বিনিয়োগকারীর যাত্রাপথ সহজ করবে ও প্রশাসনিক জটিলতা কমবে।'
জাইকা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে আরও কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—সব বিনিয়োগকারীর জন্য একটি একক প্রবেশদ্বার তৈরি, সহজ ও স্বচ্ছ অনুমোদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে বিনিয়োগকারীর যাত্রাপথ সহজ করা, প্রতিটি সেবার জন্য নির্দিষ্ট সেবা প্রদান সময়সীমা নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ, ইউনিক বিজনেস আইডি চালুর মাধ্যমে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান এবং বিভিন্ন আইপিএ ও অনুমোদন সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তঃসংযোগ স্থাপন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করে বিডা গঠন করা হয়।
Comments