পেহেলগাম হামলা ও দ্যা রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভয়ংকর বন্দুক হামলায় ২৬ নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুর পর থেকে ভারতে শোক এবং প্রতিবাদ চলছে। ২০০০ সালের পর এটিই ভারতের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় হামলা। ভারত ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ি করেছে এবং বলেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে জঙ্গিরা এসে এই কান্ড করেছে। পাকিস্তান শুরু থেকেই ভারতের এ দাবি অস্বীকার করে আসছে।
এই হামলার পর একটি নাম উঠে এসেছে যা আগে তেমন একটা শোনা যায়নি। এর নাম দ্যা রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। প্রথমে বলা হলো এই গ্রুপটা দায় স্বীকার করেছে। পরে অবশ্য তারা অস্বীকারও করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের পরিচয় কি?
২০১৯ সালে ভারত থেকে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার জন্য লড়াইয়ের লক্ষ্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল এই টিআরএফ-এর। ২০২৩ সালে এটিকে ভারত সরকার বেআইনী কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। এই গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ সাজ্জাদ গুলকে সন্ত্রাসী হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছিল।
২০১৯ সালে মোদি সরকার কর্তৃক কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর এই সংগঠন গঠিত হয়েছিল। এই সময়ে, মোদি সরকার কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে - জম্মু ও কাশ্মীর - এবং এটিকে আরও সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণের অধীনে নিয়ে আসে।
অল্প সময়ের মধ্যে টিআরএফ কাশ্মীরে বেশ কিছু অপারেশন চালায়। এই অঞ্চলের বেসামরিক নাগরিক, নিরাপত্তা বাহিনী এবং রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য করে অনেকগুলো হামলা করে সংগঠনটি। গ্রুপটি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার জনপ্রিয়তাও পায়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই অঞ্চলে পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ছেড়ে দিয়ে কিছু কর্মী এসে টিআরএফ গঠন করে। আগের সংগঠনগুলোর অধিকাংশেরই ইসলামিক নাম ছিল। টিআরএফ একটি "ধর্মনিরপেক্ষ" ভাবমূর্তি নিয়ে কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের লড়াইয়ের উপর জোর দেয়।
পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের অভিযোগ
এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর মদদপুষ্ট বলে ব্যাপক পরিচিতি আছে। পাকিস্তান বরাবরই এসব যোগসূত্র অস্বীকার করেছে। টিআরএফ-কে দেখা হয় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই-তাইয়েবাহ-এর একটি শাখা সংগঠন হিসেবে। লশকর ভারতের মাটিতে অসংখ্য জঙ্গি হামলা চালিয়েছে এক সময়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের হামলা যাতে ১৭৬ জন মারা গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও এই লশকর-ই-তাইয়েবাহ-কে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআই-এর সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে। এই সংগঠনটি পাকিস্তান থেকেই পরিচালিত। তবে লশকরের সাথে টিআরএফ-এর সরাসরি কোন যোগাযোগ এখনও প্রমাণিত হয়নি।
Comments