চাটমোহরে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জি.আর. চাউল বরাদ্দে অনিয়ম

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি মানবিক সহায়তা খয়রাতি জি.আর. চাউল বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মূলগ্রাম ফৈলজানা ও গুনাইগাছা ইউনিয়নের ১২৪ টি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৪৪ মে. টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয় নিয়ম বহির্ভুতভাবে।
রমজানের রোজাদার, মিলাদ মাহফিলে আগত মুসল্লিদের, মাদ্রাসার ছাত্রদের ও এতিমখানার এতিমদের আহার্য দানের জন্য এ সকল চাউল বরাদ্দ দেওয়া হলেও সমুদয় চাউল সরকারি মূল্যে প্রায় ৬৮ লাখ টাকা কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী অনিয়মকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে চাউল উত্তোলন করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, সম্পাদক সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ভুয়া কমিটি গঠন করে বরাদ্দকৃত চাউল উত্তোলন ও বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সেক্রেটারিগণ বরাদ্দকৃত চাউল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে সপ্তাহে সালিশ ব্যবস্থা করলেও প্রভাবশালী আত্মসাৎ কারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
ফৈলজানা ইউনিয়নের অন্তত ১৯টি মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার নামে এই বরাদ্দ দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটির অস্তিত্বই নেই। যেমন, পবাখালী দক্ষিণপাড়া মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসা, পবাখালী রোকেয়া নুরুল মাদ্রাসা, দেলোয়ার সামাদ নুরানী কিন্ডারগার্ডেনের নামে চাউল বরাদ্দ নেওয়া হলেও এর বাস্তব কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, এই তিন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আব্দুস সামাদ এবং তার ছেলে তৌফিক ইমাম ভুয়া কমিটির মাধ্যমে মোট সাড়ে দশ মেট্রিক টন চাউল উত্তোলন করেছেন।
এছাড়া, দিঘুলিয়া হাসান হোসেন রহমাতুল্লাহ আলাইহি জামে মসজিদ এবং দিঘুলিয়া পুরাতন জামে মসজিদের নামে সাড়ে চার মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে জানা যায়, পুরাতন জামে মসজিদের কোনো অস্তিত্বই নেই।
এভাবেই মিনহাজ মোড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, পবাখালী বাইতুল আমান জামে মসজিদ, পবাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ, ফরিদা শামসুল মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং পবাখালী লালন একাডেমি এসব নামেও ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে চাউল বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের আসল কমিটির সদস্যদের অন্ধকারে রেখে ভুয়া কমিটি তৈরি করে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যদের চুপ করিয়ে রাখতে ৬০০০ টাকা করে 'ম্যানেজ' করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ বলেন, পরে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে কথা বলব।
অন্য অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম বলেন, ভুলে একই মসজিদের দুটি নাম দেয়া হয়েছে, তবে সব টাকা মসজিদের ফান্ডেই জমা হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী অভিযোগ প্রাপ্তি স্বীকার করে জানান, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সত্যতা পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Comments