৫ বছরে বিএসএফের গুলিতে ১৫১ বাংলাদেশি নিহত

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গত ৫ বছরে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গেছে ১৫১ বাংলাদেশির। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধু রংপুর বিভাগেই হত্যার ঘটনা ৪০ শতাংশ। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে নানা সময় ভারত প্রতিশ্রুতি দিলেও দৃশ্যত তা পরিলক্ষিত হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত হত্যা কমাতে দুই দেশকে কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্টে গুরুত্ব দিতে হবে।
৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি বড় অংশই রংপুর বিভাগের ৬ জেলাকে ঘিরে। কৃষিসহ নানা কাজে এসব অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত রয়েছে সীমান্তে। আবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র জড়িয়েছে চোরাচালানেও। তবে দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী সরাসরি হত্যা গ্রহণযোগ্য না হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর হাতে হত্যার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরের সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছে ১১৮ জন বাংলাদেশি । এরমধ্যে ৬১ জনই রংপুর বিভাগের। সীমান্তে বসবাসকারীদের অভিযোগ, বিএসএফের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে সব সময়ই আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের।
গ্রামবাসী জানায়, তারা চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারেন না। যখন-তখন ফায়ার করে বসে। যারা কৃষি কাজ করে তারাই বোধহয় চোরাচালান করছে, এ সন্দেহে প্রায় ফায়ার করছে।
বিভাগে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটছে লালমনিরহাট জেলায়। গত ৫ বছরে এ জেলায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৯ জন।
সবশেষ গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে সিংগীমারী সীমান্তে ঘাস কাটতে গেলে বাংলাদেশ অংশে ঢুকে হাসিবুল নামে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে বিএসএফ হত্যা করে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
হাসিবুলের মা জানায়, তার ছেলেকে ধরে নিয়ে রাইফেলের মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে বুক ক্ষত করে ফেলেছে। এমন করে মেরে আটার বস্তার মতো ছুড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তে হত্যা বন্ধে দুই দেশকে কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্টে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মানসিকতারও পরিবর্তন দরকার।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ত্বহা হুসাইন বলেন, 'রেগুলেশন বা অথোরিটির যে চুক্তিগুলো রয়েছে, সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ যদি কোনো সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
বিজিবি জানিয়েছে, অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধ করাসহ সীমান্তে উত্তেজনা রোধে টহল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
১৫ বিজিবি লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, 'সীমান্তের জিরো লাইনের ১৫০ গজের ভেতরে যেন কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে এবং আমাদের নাগরিকরা যাতে জিরো লাইন ক্রস করতে না পারে, সেজন্য আমাদের টহল অব্যাহত রয়েছে।'
২০১১ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কিশোরী ফেলানী হত্যার দৃশ্য দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় তোলে। বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছরেও ন্যায়বিচার পায়নি তার পরিবার।
Comments