বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত

ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত সরকার। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ডের (সিবিআইসি) জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত সরকার স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে বন্দর এবং বিমানবন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে।ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে ভারতের রপ্তানিকারকরা, বিশেষ করে পোশাক খাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশকে দেওয়া এই সুবিধা প্রত্যাহারের জন্য নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের জন্য এটি বড় ধরনের ধাক্কা বলে দাবি ভারতীয়পক্ষের। কারণ ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে রপ্তানি সহজ ও সাশ্রয়ী ছিল।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানে ট্রানজিটে থাকা পণ্য বিদ্যমান প্রক্রিয়ার আওতায় ভারত ছাড়তে পারবে, তবে নতুনভাবে ট্রানজিট সুবিধা অবিলম্বে বাতিল করা হয়েছে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, 'এই পদক্ষেপের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে সহায়তা করে এসেছে, তবে এই সিদ্ধান্তে বোঝা যাচ্ছে যে অর্থনৈতিক সুবিধা কখনও জাতীয় নিরাপত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়,' তিনি মিন্ট-কে বলেন, 'বাংলাদেশের লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি চীনের সহায়তায় সচল করার উদ্যোগ ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের কাছাকাছি হওয়ায় এটি ভারতের 'রেড লাইন' অতিক্রম করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।'
লালমনিরহাটের বিমানঘাঁটিটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর বা 'চিকেনস নেক'-এর খুব কাছে, যা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগের একমাত্র পথ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে কৌশলগত সহযোগিতার চেষ্টা করছে এমন প্রতিবেদনে নয়াদিল্লিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও নেতিবাচক প্রভাব: এই ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের প্রভাব শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভুটান ও নেপাল, দুটি স্থলবেষ্টিত দেশ যারা ভারতের ওপর বাণিজ্যিকভাবে নির্ভরশীল, তারাও বাংলাদেশ সংযুক্ত করিডোর বন্ধ হওয়ায় নতুন সংকটের মুখোমুখি হবে।
ভারত এখনো এই দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট অংশীদার হলেও, হঠাৎ করিডোর বন্ধ করে দেয়ায় কূটনৈতিক টানাপড়েন এবং সরবরাহ চেইনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। মিয়ানমার, যেটি ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানির একটি গন্তব্য, বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধির মুখোমুখি হতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিও।
'এটি বাংলাদেশি রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি ও বিলম্ব ঘটাতে পারে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য স্বপ্নেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে,' বলেন শ্রীবাস্তব। 'এমনকি আলোচনার বিষয় হতে পারে যে ভারত এখনও ডব্লিউটিওর-এর অধীনে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য ট্রানজিট দায়িত্ব পালন করছে কিনা।'
Comments