অনিয়মিত ঘুমের প্রভাবে কি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে?

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে না ঘুমান এবং না জাগেন, তাহলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে।
হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে চিলড্রেন'স হসপিটাল অব ইস্টার্ন অন্টারিও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান লেখক জ্যাঁ-ফিলিপ শাপুট বলেন, ঘুমের অনিয়মিতা বলতে বোঝায় প্রতিদিন ভিন্ন সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা। এটি শরীরের কার্যপ্রণালি ব্যাহত করে এবং স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই গবেষণা দেখিয়েছে, হৃদরোগ প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য নির্দেশিকা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঘুমের নিয়মিততাকে অগ্রাধিকার দেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
জার্নাল অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, ঘুমের সময় নির্দিষ্ট না থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। গবেষক জ্যাঁ-ফিলিপ শাপুট বলেন, "ঘুমের অনিয়মিত অভ্যাস শরীরের সার্বিক কার্যপ্রণালিতে ব্যাঘাত ঘটায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই গবেষণায় ৪০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ৭২,০০০-এর বেশি অংশগ্রহণকারী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাদের কারও পূর্বে হৃদরোগের ইতিহাস ছিল না। অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের নিয়মিততা অনুযায়ী তিনটি দলে ভাগ করা হয়:
নিয়মিত: এসআরআই ৮৭.৩ বা এর বেশি
মধ্যম অনিয়মিত: এসআরআই ৭১.৬ থেকে ৮৭.৩
অনিয়মিত: এসআরআই ৭১.৬ এর কম
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অনিয়মিতভাবে ঘুমান, তাদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হার্ট ফেইলারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
ঘুমের অভ্যাস গুরুত্ব: স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের স্লিপ সায়েন্স বিশেষজ্ঞ স্কট কুচার বলেন, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা বায়োলজিক্যাল ক্লক সঠিকভাবে কাজ করে, যা সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগা
- ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করা
- অন্ধকার ও শান্ত ঘরে ঘুমানো
- রাতে ভারী খাবার এবং ক্যাফেইন পরিহার করা
- মোবাইল ও স্ক্রিন টাইম সীমিত রাখা
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বারবার অনিয়মিত ঘুমের সমস্যা হয়, তাহলে দ্রুত জীবনধারায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সময়মতো ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা না গেলে, দীর্ঘমেয়াদে এটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Comments