'আফগানিস্তান পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না'

কিছুদিন আগে রিকি পন্টিং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের চেয়ে আফগানিস্তানের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। একই সুরে কথা বলেছেন প্রোটিয়া কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সও। তার মতে, নাজমুল হোসেন সান্তর দল নকআউট স্টেজে ওঠার মতো শক্তিশালী নয়। এবার অনেকটা একই সুর খ্যাতিমান ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের কণ্ঠেও। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা নেয়ার জন্য দৃষ্টান্তও বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিয়েছেন এই ভারতীয়।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ফেবারিট ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। ভারত-পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ডেথ গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। ফলে টাইগারদের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা খুব একটা দেখছেন না কেউই। সাম্প্রতিক ফর্মও বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে না।
সবশেষ দুই সিরিজে বাংলাদেশ হেরেছে আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নিতে পারেনি। এমনকি ২০২৩ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বও পার হতে পারেনি তারা।
এর বিপরীতে আফগানিস্তান সেরা আটে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা নিশ্চিত করার পর সবশেষ পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজের চারটিতেই জয় পেয়েছে। এই সময়ে তারা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও ভালো করছে আফগানরা। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা চারটি ম্যাচে জয় পেয়েছে। এরপর গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল তারা।
হার্শা ভোগলে মনে করেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের উচিত আফগানদের মানসিকতা নিয়ে খেলা। ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে এই ধারাভাষ্যকার বলেন, 'আমি মোটেও অবাক হবো না যদি বাংলাদেশ ভাবে–আফগানিস্তান যদি আইসিসির সবশেষ ইভেন্টে সেমিফাইনাল খেলতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না? তাদের এই আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত। কিন্তু তাদের গ্রুপটা খুবই কঠিন।'
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই ফর্মহীনতায় ভুগছিলেন সাকিব আল হাসান। এরপর গত আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় দলে সাকিবের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এরপর বোলিং অ্যাকশন অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও জায়গা হয়নি সাকিবের। হার্শা মনে করেন, বাংলাদেশের এখন তাদের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়াই সামনে আগানোর কথা ভাবা উচিত।
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, তাদের (বাংলাদেশ) এটা মেনে নিতে হবে যে, তাদের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়টি আর নেই। কয়েক বছর থেকেই সে তার সেরা অবস্থানে ছিল না। তার অনুপস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।'
বাংলাদেশের স্কোয়াডে থাকা মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গত আসরে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সে হিসেবে টাইগারদের দলটিকে অভিজ্ঞই বলতে হবে। তবে দলে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে অন্যান্য দলের চেয়ে অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে টাইগাররা। হার্শা মনে করেন, তাওহীদ হৃদয় তানজিদ তামিমের মতো তরুণরা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারবেন।
তিনি বলেন, 'তাদের তানজিদ এবং তাওহীদের মতো প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ খেলোয়াড় আছে, তাদের বড় স্কোর গড়তে হবে। বাংলাদেশ সৌম্য সরকারকে ফিরিয়েছে, তাকে কয়েকবার সুযোগও দিয়েছে। সে ভালো খেলোয়াড় কিন্তু নিজের সেরাটা দিতে পারেনি। এরপর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ আছেন–দুজনই দক্ষ খেলোয়াড়। মজার বিষয় তারা সবশেষ (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) টুর্নামেন্ট খেলেননি।'
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ দারুণ উন্নতি করেছে। তাসকিন আহমেদ, তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান এবং নাহিদ রানার মতো প্রতিভারা বোলিং আক্রমণের হাল ধরেছেন। স্পিন বিভাগেও মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদরা আছেন। হার্শা মনে করেন, বড় দলগুলোর বিপক্ষে মিরাজই প্রধান অস্ত্র হতে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী। তবে যদি একজন বোলারের কটাহ বলতে হয় যিনি বড় দলগুলোকে বিপদে ফেলবে, তবে সেটা মেহেদী হাসান মিরাজই।'
Comments