যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক ধনিক শ্রেণির উত্থানে গভীর উদ্বেগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে বিকাশমান একটি 'বিপজ্জনক' ধনিক শ্রেণির উত্থান হচ্ছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই প্রভাবশালী গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করছে এবং সমাজে অসমতার বিস্তার ঘটাচ্ছে।গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো জনগণের ক্ষমতা। কিন্তু ধনী ও প্রভাবশালী একটি শ্রেণি অর্থ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করছে। এটি কেবল গণতন্ত্রের জন্য নয়, সমাজের ভারসাম্যের জন্যও বড় হুমকি।
তার বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাইডেন মূলত ধনী গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাদের মতে, তার এই বক্তব্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বৈশ্বিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। আর মেয়াদ শেষে বিদায় নেবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইডেন। ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার দিন কয়েক আগে বাইডেন তাঁর বিদায়ী ভাষণ দিলেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বাইডেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বাইডেন লড়তে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।
বাইডেন তাঁর ভাষণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফ্ল্যাটফর্মগুলোকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, আমেরিকানরা ভুল তথ্য ও অপতথ্যের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফ্ল্যাটফর্মগুলোর জবাবদিহির আহ্বান জানান তিনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বিপুল সম্ভাবনা দেখলেও এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন বাইডেন। তিনি বলেন, এআই বিপুল সম্ভাবনা উপহার দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্ক না থাকলে তা নতুন হুমকির জন্ম দিতে পারে। রূপান্তরমূলক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনের ওপর নেতৃত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাঁর অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলেছে প্রভাবশালী শক্তি। ক্ষমতা, মুনাফার স্বার্থে তারা এই কাজ করছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা নৃশংস সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এই প্রসঙ্গটিও বাইডেনের ভাষণে উঠে এসেছে। বাইডেন দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তিনি গত বছরের মে মাসে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখন যে চুক্তিটিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে, তা তাঁর প্রস্তাবিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই করা।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি তাঁর প্রশাসনের সাফল্যের জন্য গর্বিত। আশাবাদী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাইডেন তাঁর ভাষণ শেষ করেন। তিনি আমেরিকানদের দেশ সম্পর্কে তাঁর আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমেরিকানদের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, এখন দেশের জনগণের প্রহরীর ভূমিকা পালন করার পালা।