আমাদের জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব

ডিজিটাল যুগে এসে দিনের বড় অংশ অনেকের কাটে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করে। কাজের ব্যস্ততার মাঝেও আমরা একটু স্বস্তি খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা কিংবা ছুটির দিনে পরিবারের সবাই মিলে গল্প করার চেয়ে আমরা এখন ঘরের এককোণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করি। ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে মিশে গিয়ে আমরা এখন অনেকেই কেমন যেন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি, এমনটাই বলছেন মনোবিদরা। স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে আমাদের ওপর কেমন প্রভাব পরছে সেটা জানতে হয়েছে একাধিক গবেষণা। সাইকোলজি টুডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি। মনোবিদ ডেভিয়া সিলস বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রভাব: সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন আর তার প্রভাব জীবনে কীভাবে পরছে সেটা ভাবনার বিষয়। মনোবিদ ডেভিলা বলেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কেও প্রভাব দেখা দেয়। মানুষ সামাজিক জীব তাই এবং স্বাভাবিকভাবেই আমরা একজন অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাস আপডেট এবং প্রতিক্রিয়ার পদ্ধতি আমাদেরকে আত্মমুখী করে তোলে। এটা আমাদের বিষয় নেটিবাচকও করে তলে, অনেক সময় আমরা অন্যের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত থাকি।
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে ২০১৭ সালে মনোবিদ আন্দ্রেয়াসেন এবং সহকর্মীরা ২৩,৫৩২ জন মানুষের ওপর একটি গবেষণায় করে। এতে দেখা গেছে, কম আত্মবিশ্বাস এবং আত্মকেন্দ্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে দীর্ঘসময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের যোগসূত্র রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের অন্যদের সঙ্গে যুক্ত করে এটা ঠিক। তবে একই ভাবে এটা এক ধরনের দূরত্ব তৈরিতে উৎসাহিত করে। যার ফলে সরাসরি দেখা করার থেকে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি আরাম পাই। তাই দীর্ঘসময় আমরা স্কোলিং করে কাটিয়ে দেই। এটা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আমরা অন্যের সঙ্গে নিজের আবেগ প্রকাশ করতে ভুলে যাই। 'ভার্চুয়াল ডিসএনগেজমেন্ট' তত্ত্ব অনুসারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত মিথস্ক্রিয়া সহানুভূতি এবং অন্যের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা হ্রাস করতে পারে (টাভারেস এবং রেইন, ২০২৪)।
এছাড়াও ২০২১ সালে ক্রিস্টিনসডটটিরের এক গবেষণা করেন ৩৪৪ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। যেখানে বলা হয় ব্যবহার করা প্ল্যাটফর্ম এবং মিথস্ক্রিয়ার ধরন প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ঐ গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে সময় ব্যয় করার সঙ্গে 'কমিউনাল নার্সিসিজম' বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু রেডিটের সঙ্গে এই সম্পর্ক দেখা যায়নি।
দলগত পরিচয় ও প্রভাব: সোশ্যাল মিডিয়ায় দলগত পরিচয়ের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এটি দীর্ঘদিন ধরেই জানা গেছে যে, মানুষ তাদের সঙ্গে মিল আছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি বেশি ঘনিষ্ঠতা অনুভব করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সম্পর্ক অনুভব করে, তবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকদের খারাব অবস্থায় খুশি হয়। যেমনটা আমরা বিভিন্ন খেলার সময় দেখতে পারি। প্রিয় দলের ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন পোস্ট করে। এবং বিপক্ষ দলের পরাজয়ে তারা আনন্দ করে।
সমাধানের উপায়: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসা বর্তমান সময়ে বেশ কঠিন। নানা কারণেই আমাদের এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি, যা সহানুভূতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। মনোবিদরা বলেন, অনলাইনে এবং বাস্তব জীবনের মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে। আমাদের সাধারণ চেনা বৃত্তের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধারণা ও জীবনধারার অভিজ্ঞতা নেয়ার যেটা পারে বলছেন মনোবিদরা।
অফলাইনে সহানুভূতি গড়ে তোলার জন্য আরও কিছু কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে, যেমন: বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা, অন্যদের জীবন অভিজ্ঞতা এবং গল্প সম্পর্কে কৌতূহলী হওয়া, এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। এ ধরনের উদ্যোগ সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাবগুলো হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে এবং সামাজিক সংযোগ আরও গভীর করতে পারে।
Comments