ভারত বিরোধী কোনো কাজ হতে দেয়া হবে না: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে বলেছেন যে, শ্রীলঙ্কার জমি থেকে তিনি ভারত-বিরোধী কাজ হতে দেবেন না। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর এই মন্তব্য করেছেন দিশানায়েকে।
মোদির সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দিশানায়েকে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে শ্রীলঙ্কা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে এই আশ্বাস দিয়েছি যে, আমরা আমাদের জমি থেকে ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ হতে দেব না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা আরও বাড়বে। আমি আবার আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা ভারতকে সমর্থন করে যাবো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দিশানায়েকে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে আমি ভারতে এসেছি। শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটে এবং ঋণের পুনর্গঠনে ভারত যেভাবে সাহায্য করেছে, তাতে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমি বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, ব্রিকস, হাইড্রোগ্রাফিক গবেষণা বে-আইনিভাবে মাছ ধরা বন্ধ করার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছি।
এদিকে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমরা মাল্টি-প্রোডাক্ট পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুতের গ্রিড বসানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে ভারত এলএনজি সরবরাহ করবে।
ডয়চে ভেলে বলছে, রামেশ্বরম থেকে তালাইমানার পর্যন্ত ফেরি চলাচলেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই দেশই প্রতিরক্ষা চুক্তি করা নিয়ে সম্মত হয়েছে। মোদি দুই দেশের নিরাপত্তা স্বার্থের কথা জানিয়ে বলেছেন, মৎস্যজীবীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশই এক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেবে বলে ঠিক হয়েছে।
এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, মৎস্যজীবাদের ক্ষেত্রে কোনো দেশই বলপ্রয়োগ করবে না বলে ঠিক হয়েছে।
ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, 'দিশানায়েকে প্রথম বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ভারতকে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে দিয়ে তিনি একটা বার্তা দিয়েছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে তিনি কতটা বেশি গুরুত্ব দেন।
মনে রাখতে হবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কে পি শর্মা ওলি প্রথমে চীনে গেছিলেন, মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে তুরস্কে গেছিলেন। আর ভারতে দাঁড়িয়ে দিশানায়েকে যে শ্রীলঙ্কার জমি ভারত-বিরোধী কাজে লাগাতে দেবেন না বলেছেন, এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
শরদ বলেছেন, 'ভারত মহাসাগরে চীনের তৎপরতা নিয়ে ভারতের একটা উদ্বেগ আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বামপন্থি নেতা দিশানায়েকের মন্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ রোহন সমরাবীরা এনডিটিভি-কে বলেছেন, ভারত ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে হাইড্রোগ্রাফিক গবেষণা করতে সম্মত হয়েছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন ঠিক এই কাজটাই করছে। শ্রীলঙ্কার দিক থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পাইপলাইন, সেতু-সহ পরিকাঠামোরগত ক্ষেত্রে ভারত সহযোগিতা করবে। এটা শ্রীলঙ্কার কাছে সুখবর।খবর ডয়চে ভেলের।