শরীরে ট্যাটু আঁকা হারাম?

ট্যাটু ইংরেজি শব্দ। বাংলায় উল্কি। শরীরের চামড়ায় সুঁই বা এ জাতীয় কোনো যন্ত্র দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রঙ দিয়ে নকশা করাকে ট্যাটু বা উল্কি বলে। এ ধরনের ট্যাটু বা উল্কি মরণ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে, সহজে ওঠানো যায় না। হাদিসে রাসুল (সা.) উল্কি আঁকতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, 'আল্লাহ তায়ালা অভিশম্পাত করেন, যারা নিজেরা পরচুলা ব্যবহার করে এবং যারা অপরকে তা লাগিয়ে দেয়, যারা অঙ্গ–প্রত্যঙ্গে উল্কি বা ট্যাটু আঙ্কন করে, অন্যকে তা করিয়ে দেয়।' (বোখারি: হাদিস ৫৯৩২-৫৯৩৩)
শরীরে উল্কি বা ট্যাটু আঁকা পশ্চিমাদের সাধারণ ফ্যাশন। বর্তমানে আমাদের দেশেও ট্যাটু আঁকতে দেখা যায়। বিভিন্ন চিত্রশিল্পী, গায়ক ও খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা রঙ ও বর্ণের বিভিন্ন ধরনের উল্কি কিংবা ট্যাটু দেখা যায়।
আল্লাহ মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, 'নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে।' (সুরা: তীন, আয়াত ৪)। আল্লাহর দেয়া সুন্দর আকৃতিকে বিকৃতি করার অধিকার আমাদের নেই। এজন্য ইসলামে ট্যাটু আর্টকে সম্পূর্ণরুমে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ট্যাটু মানুষের শরীরে ক্ষতি সাধন করে মারাত্মকভাবে।
জার্মানির রাসায়নিক পদার্থ গবেষক এফা মারিয়া কাটস ট্যাটু আঁকার বিষয়ে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী থেকে শুরু করে উল্কি আঁকার কালি নিয়ে গবেষণা করি। ২০১০ সালে আমরা বেশ কিছু ট্যাটু পার্লার থেকে কালি সংগ্রহ করেছি। প্রায় ৩৮ ধরনের কালি আমাদের সংগ্রহে আসে। এর মধ্যে লাল, হলুদ এবং কমলা রঙ ছিল সবচেয়ে বেশি।
অনেক রঙ বা কালি তৈরি করা হয় এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে যা কোনো প্রাণীর ওপর ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এর মধ্যে একটি পদার্থের নাম এজো ডাই। রঙটি এমনিতে কোনো ক্ষতি করবে না কিন্তু অন্য কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসলে তা হবে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
তিনি আরও বলেন, শরীরে উল্কি আঁকানোর বৈজ্ঞানিক কোনো উপকারিতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। উল্টো উল্কি ব্যবহারে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। হেপাটাইটিস, টিউবারকিউলোসিস, টিটেনাসের মতো ইত্যাদি রোগের সংক্রমণের আশংকা থাকে। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর কাছে এসে এক নারী জিজ্ঞেস করলেন, কোরআনের কোথাও তো উল্কি আঁকার বিষয়ে কথা নাই। আপনি এটা নিষেধ করলেন কেনো? ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, যদি তুমি কোরআন পড়তে অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি? রাসূল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।
অনেক হাদিসে ট্যাটু আঁকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, 'যেসব নারী নকল চুল ব্যবহার করে এবং যারা অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয়, যেসব নারী উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।' (বোখারি, হাদিস: ৫৫৯৮, মুসলিম, হাদিস: ৫৬৯৩)
হজরত আবদুল্লা ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, 'যেসব নারী সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, যেসব মহিলা ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের অভিসম্পাত করেছেন।' (বোখারি, হাদিস: ৫৬০৪)
এমন আরও একটি হাদিস মুসলিম শরিফে এসেছে যেটা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়।' (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)
উল্কি বা ট্যাটু শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ তা নয়; বরং বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকের পাশাপাশি বেশ কিছু শারীরিক অসুবিধা ও সমস্যাও এতে তৈরি হয়।
উল্কির কারণে চামড়ায় পানি পৌঁছাতে যদি বাধার সৃষ্টি হয়, তাহলে অজু আদায় হবে না। আবার ফরজ গোসলও সম্পন্ন হবে না। ফলে সব সময় অপবিত্র শরীর থেকে যাবে। এজন্য ইসলাম ট্যাটু বা উল্কির বিষয়ে কঠোরতা দিয়েছে।
Comments