চা-বিস্কুট একসঙ্গে খাওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে না তো?
অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কিংবা নাশতায় চা থাকা চাই-ই চাই। আবার অফিসে কাজের ফাঁকে, দুপুরে খাবারের পর বা বিকেলে সহকর্মী কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় চা রাখা হয়। যেকোনো আড্ডা-আয়োজনে যেমন চা থাকে, একইভাবে চায়ের সঙ্গে প্রথম পছন্দ থাকে বিস্কুট। কেউ কেউ আবার সময় স্বল্পতার জন্য হালকা নাশতা হিসেবেও চা-বিস্কুট খেয়ে থাকেন। এতে কিছুটা সময়ের জন্য ফুরফুরে মেজাজে থাকা যায়।
চা-বিস্কুট একসঙ্গে খাওয়ার এই অভ্যাস চা প্রেমিকরা স্বাভাবিকভাবে নিয়ে থাকেন। তবে এ নিয়ে বর্তমান সময়ে অনেকের মধ্যে নানা যুক্তিতর্ক দেখা যায়। কেউ বলে থাকেন চা-বিস্কুট একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়। এতে নাকি শরীরের ক্ষতি হয়। আবার কেউ বলেন, এই দাবির কোনো সত্যতা নেই। চা-বিস্কুট একসঙ্গে খেয়ে বরং সাময়িক ভালো অনুভব করা যায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চা-বিস্কুট কি আসলেই একসঙ্গে খেলে ক্ষতি হয়, না এর উপকারিতা রয়েছে? বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম। এবার তাহলে এই পুষ্টিবিদের পরামর্শ জেনে নেয়া যাক।
চা-বিস্কুট একসঙ্গে খাওয়া ভালো না ক্ষতি: পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, চা-বিস্কুট একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়। সবারই জানা যে, বিস্কুটের মূল উপকরণ ময়দা। বিস্কুট তৈরির সময় ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহার করা হয়। যা শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ বাড়িয়ে থাকে। এ থেকে হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা, স্ট্রোক এবং ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই চা পানের সঙ্গে বিস্কুট খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করাই ভালো।
অন্যান্য যেসবে ক্ষতি: চায়ের সঙ্গে বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতির বিষয়টি স্বাস্থ্য সচেতনরা হয়তো মেনে চলেন। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডের দোকানে দেখা যায়, চায়ের সঙ্গে চপ বা এ ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন কেউ কেউ। এতে সমস্যা আরও প্রকট হয়। ছোট ছোট বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধার ঝুঁকি থাকে। যা থেকে অনেক সময় জটিল অসুখও হয়ে থাকে। এ ধরনের অভ্যাস থাকলে এখনই নিজেকে সংশোধন শুরু করুন।
বিকল্প কী: বিস্কুট বা এ জাতীয় খাবার কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যদি স্বাস্থ্যগুণের কথা বলা হয়, তাহলে বিস্কুটের বিকল্প হিসেবে ছোলা বা বাদাম হতে পারে সেরা ও পুষ্টিকর খাবার। চাইলে মুড়ি ও চিঁড়াও খেতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
যদি বিস্কুট খেতেই হয়: এমন অনেকেই আছেন যাদের প্রথম পছন্দ বিস্কুট। অর্থাৎ, বিস্কুট ছাড়া তাদের চলে না। এ ধরনের মানুষের ধীরে ধীরে বিস্কুট খাওয়ার অভ্যাস থেকে সরে আসা উচিত। তবে যদি খেতেই হয় তাহলে সারাদিনে একটি বিস্কুট খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভুল করেও মিষ্টি বা নোনতাজাতীয় বিস্কুট খাওয়া যাবে না। ভরসা রাখতে পারেন থিন অ্যারারুট বিস্কুটের ওপর। অথবা চাইলে ওটস বা ডায়জেস্টিভ বিস্কুটও খেতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি খুব কম থাকে।
চায়ে চিনি বা মিষ্টি নয়: চা ছাড়া যেহেতু চলেই না, এ জন্য সেই প্রিয় পানীয় যেন স্বাস্থ্যকর থাকে সেদিকে নিজেকেই খেয়াল রাখতে হবে। চা হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। নিয়মিত চা পানে হার্ট ও স্ট্রোক সংক্রান্ত অসুখ দূরে থাকে। ক্যানসারের মতো সমস্যাও দূর হয়। এসব উপকারের জন্য চা পান করতে পারেন। তবে চা থেকে উপকার পেতে তাতে চিনি বা মিষ্টিযুক্ত কিছু মেশানো যাবে না। এতে শরীরের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। কেউ কেউ আবার দুধও মিশিয়ে থাকেন। এটাও ঠিক নয়। সম্ভব হলে শুধু র চা পান করবেন। তাতেই নানা উপকার মিলবে।
দিনে কয় কাপ চা: সহকর্মী বা বন্ধুমহলে চলতে গিয়ে অনেকেই দিনে ৮-১০ কাপও চা পান করে থাকেন। বিষয়টি কেউ কেউ খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়ে থাকেন। যা উচিত নয়। এতে নানা অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ অভ্যাস থেকে আজই বেরিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা করুন। দিনে ২ থেকে ৩ কাপের বেশি চা পান করবেন না। তা না হলেই শরীরে আয়রন গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যাও হতে পারে। এ জন্য দিনে ২ থেকে ৩ কাপের বেশি চা পান না করাই ভালো।