শান্তর নেতৃত্ব ছাড়া নিয়ে যা বললেন বিসিবি পরিচালক
ফর্মহীনতায় প্রশ্নের মুখে ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর অধিনায়কত্ব। তাই সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন গতকাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, টপ অর্ডারের এ ব্যাটারকে নির্ভার রাখতে তিন ফরম্যাটের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারে ক্রিকেট বোর্ড। তবে শান্ত মনে হয় সেই ভাবনার সময়টুকুও দিতে চাননি বিসিবিকে। তাই তো নেতৃত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
ক্রিকেট বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ক্রিকবাজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শান্ত ইতোমধ্যে বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদকে তিনি তার সিদ্ধান্ত কথা জানিয়েছেন। এখন তা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন শান্ত। বোর্ড সভাপতি বর্তমান দেশের বাইরে আছেন।
বিসিবির এক কর্মকর্তা ক্রিকবাজকে বলেন, হ্যাঁ, শান্ত আমাদের জানিয়েছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চায়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন শান্তও, দেখা যাক কী হয় (নেতৃত্ব যেহেতু চিন্তার কারণ মনে হচ্ছে), আমি বোর্ড সভাপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়ে শনিবার (২৬ অক্টোবর) মিরপুরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতিরিক্ত চাপেই অধিনায়কত্ব করতে পারছেন না শান্ত।
বিসিবির এ পরিচালক আরও বলেন, তার (শান্ত) মতো একজন খেলোয়াড়ই আমাদের কারণে অধিনায়কত্ব করতে পারছে না। আমাদের মতো দেশে অধিনায়ক হওয়া মানে সব সময় চাপে থাকতে হবে, ভালো পারফরম্যান্স হবে না, তাকে নিয়ে আমরা যে পরিমাণ সমালোচনা করি, যেভাবে সমালোচনা করি, তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ভালো না খেলার কারণও হয়তো সেটা।
শান্ত চাপ নিতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় খুব প্রয়োজন ছিল ওর পাশে থাকা, ওকে সমর্থন দেয়া। এটা মনে রাখা, সে বাংলাদেশ দলের মতো একটা দলের অধিনায়ক। এই দল খুব অধারাবাহিক। সে নিজেও একজন তরুণ খেলোয়াড়। ওর ব্যাপারে আরেকটু সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল। আমরা যদি শান্তকে না রাখি অধিনায়ক হিসেবে কিংবা সে যদি না থাকতে চায়, কারও না কারও কাছে যেতে হবে আমাদের। তাকে (নতুন অধিনায়ক) তো সেই একই ব্যাপারের মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে শান্ত সরে দাঁড়ালে কে হবেন বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক এ নিয়ে চলছে আলোচনা। জোর গুঞ্জন এবার আর বিসিবি এক অধিনায়কে যাচ্চে না। সেক্ষেত্রে ওয়ানডে ও টেস্ট ফরম্যাটের দায়িত্ব পেতে পারেন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। আর টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব পেতে পারেন ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়।
২০২৩ সালে ব্যাট হাতে অসাধারণ সময় কাটান শান্ত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও ছিলেন দুর্দান্ত। ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এবং এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ওই বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে সিলেট টেস্টে কিউইদের বিপক্ষে শতরান করে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করেন।
কিন্তু নেতৃত্ব তুলে দেয়ার পর তার ব্যাট থেকে আর রান প্রসব হচ্ছে না। টেস্টের সবশেষ ১৩ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি তার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে রান নেই সংক্ষিপ্ত সংস্করণেও। তবে এই সময়ে তিনিটি ওয়ানডে খেলে একটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। ক্রিকবাজ জানিয়েছে, বিশ্বকাপের পরই টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মত বদলে তিন ফরম্যাট থেকেই সরে যেতে চান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বোর্ডের এক কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য তাকে পরামর্শ দিলেও শান্ত নিজ সিদ্ধান্তে অনড়। শান্তকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক বছরের জন্য তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক করা হয়। সে হিসেবে পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই নেতৃত্বের ভারমুক্ত হতে চান তিনি।
নাজমুল শান্ত ৯ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনটি জয় ও ছয়টি পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। তার নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় অর্জন পাকিস্তানের মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়। এছাড়াও ৯টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে ৬ হারের বিপরীতে জয় ৩টিতে। ২৪ টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছেন ১০টিতে।