উল্লাপাড়ায় অবৈধ খিরার হাটে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অবৈধ খিরার হাট বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চলনবিল অধ্যুষিত লাহিড়ী মোহনপুর, বড়পাঙ্গাসী, উধুনিয়া, ভাগুড়া, ফরিদপুর প্রচুর পরিমানে খিরা শসা চাষাবাদ হয়। আর এই খিরা চাষাবাদ কে কেন্দ্র করে উল্লাপাড়া উপজেলার কয়রা বর্ধনগাছা, চাকসা দুটি পাইকারি খিরার আড়ৎ বসেছে। খিরা শসা মৌসুমের অন্তত ৮ মাস কেনাবেচা চলে এই হাট।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এই দুটি খিরার হাটে ক্রেতা বিক্রেতা সরগরম থাকে। প্রতিদিন অন্তত ৩০/৪০ ট্রাক খিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। চলনবিলের খিরার মান ভালো হওয়াতে এই হাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা আসে খিরা কেনার জন্য। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা খিরা কেনাবেচা হলেও রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। ১৫ বছর ধরে চলছে এ হাট।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে কয়রা বর্ধনগাছা হাট স্থাপন করে কয়েকজন এলাকাবাসী। ৪ বিঘার উপর এই হাট কমিটিতে রয়েছে ৫০ জন। হাট থেকে যা আয় হয় তা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়, এবং এর কিছু অংশ স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসার উন্নতিকল্পে দান করা হয়। এর ২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চাকসা করম আলীর খিরার হাট, এখানে করম আলী নামে ব্যক্তির ছেলেরা হাটটি পরিচালনা করছে, তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর হাটের খাজনা যা পায় সবই তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।
উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় দুটো খিরার হাট বসলেও ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করা এই দুটো হাট থেকে রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার এতে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ব্যবসায়ী জানান, চরবর্ধনগাছা খিরার হাট থেকে ৩/৪ ট্রাক খিরা পাইকারি কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। মন প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা করে খাজনা দেওয়া হয়। এই হাটে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের লাভ নেই, হাট থেকে যে দরে খিরা কিনছি সেই দামেই আবার মহাজনদের দিতে হচ্ছে, এতে করে আমরা লাভবান হতে পারছি না।
ঢাকার কিছু ব্যবসায়ী প্রতিদিন সকালে খিরা কিনে ঢাকার কাওরান সবজি বাজারে বিক্রি করে থাকেন। চলনবিলের খিরার চাহিদা বেশি প্রতিদিন তিনি ঢাকায় খিরা নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। এ বিষয়ে কয়রা বর্ধনগাছা হাটের ইজারাদার মওলানা আব্দুস সাত্তার দরদি জানান, তারা তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর হাট বসিয়েছে, খাজনা যতটুকু পায় হাটের অংশীদারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও এর কিছু অংশ স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসা পেয়ে থাকে। হাটের রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার, এ বিষয়ে তিনি বলেন সরকার তাদের নিজস্ব সম্পত্তির ওপর হাট বসিয়ে খাজনা উত্তোলন করুক তাদের আপত্তি নেই।
এছাড়া এই হাটে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক খিরা বিক্রি হয় যা টাকার পরিমান প্রায় ১ কোটি। তিনি আরো বলেন কৃষকরা এই হাটে খিরা বিক্রি করতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় না। তারা এখানে খিরা বিক্রি করতে পেরে অনেক আনন্দিত।
হাটের ইজারা রমজান আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে, তিনি বলেন সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া টা অবৈধ। আমরা যেহেতু রাজস্ব দিচ্ছি না সেহেতু আমরাও অবৈধ কাজ করছি। তবে হাটের যে টাকা উত্তোলন হয় তার কিছু অংশ টাকা স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসাতে দেওয়া হয়। এছাড়া আমরা ৬৫ জন সদস্য বাকি টাকা নিয়ে থাকি। এছাড়াও এই হাজের জায়গা আমরা ২ শতক করে কিনেছি।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ হাসনাত জানান, খিরার হাটে এই মৌসুমে প্রচুর পরিমানে খিরা ও শশা বিক্রি হয়ে থাকে। তবে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় খুব দ্রুতই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।