দক্ষিণ আফ্রিকায় জি-২০ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আসন্ন এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না।তিনি এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে দাবি করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর নিপীড়ন চলছে। ট্রাম্পের ভাষায়, এমন 'মানবাধিকার লঙ্ঘন' চলতে থাকলে কোনো মার্কিন কর্মকর্তা ওই সম্মেলনে অংশ নেবেন না। শনিবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ট্রাম্প বলেন, "জি-২০ সম্মেলন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হওয়া একেবারেই লজ্জাজনক"। তিনি দাবি করেন, "আফ্রিকানাররা (যারা মূলত ডাচ, ফরাসি ও জার্মান বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ) হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাদের জমি ও খামার অবৈধভাবে দখল করা হচ্ছে।" তিনি আরও জানান, "এই মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকা পর্যন্ত কোনো মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন না।"
দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে "দুঃখজনক" বলে অভিহিত করেছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "আফ্রিকানারদের শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী হিসেবে বর্ণনা করা ইতিহাসবিরোধী এবং এই জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের অভিযোগের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।" দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো রাজনৈতিক দল — এমনকি শ্বেতাঙ্গ বা আফ্রিকানার প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোও — দেশে গণহত্যা চলছে বলে কোনও দাবি করেনি।
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা জি-২০–এর সদস্য হওয়া উচিত নয় এবং তিনি নিজে না গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে পাঠাবেন। কিন্তু হোয়াইট হাউস এখন জানাচ্ছে, কোনো মার্কিন কর্মকর্তা সেখানে যাবেন না। জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন প্রতি বছর একটি সদস্য দেশ করে থাকে এবং সেই দেশই সম্মেলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার পর যুক্তরাষ্ট্রই এই আয়োজনের ভার পেতে চলেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলেছে, শ্বেতাঙ্গ গণহত্যার অভিযোগের "নির্ভরযোগ্য কোনও প্রমাণ নেই" এবং এটি "সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন"। এ বিষয়ে দেশটির আদালতও এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে রায় দিয়েছে যে, এমন দাবি "কল্পনাপ্রসূত।"
চলতি জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করে আসছেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। এরপর গত মে মাসেও তিনি হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মুখোমুখি হয়ে একই দাবি তুলেছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত আফ্রিকানারদের শরণার্থী মর্যাদা দিয়েছে এবং বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় "গণহত্যা" চলছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার জানায়, এই দাবি "বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য" এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সেই শরণার্থী সুযোগ "খুব সীমিতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।"
প্রসঙ্গত, এশীয় আর্থিক সংকটের পর ১৯৯৯ সালে জি-২০ গোষ্ঠী গঠিত হয়। বর্তমানে এই গোষ্ঠীর সদস্যদেশগুলো বিশ্বের ৮৫ শতাংশ সম্পদের মালিক। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর প্রথমবারের মতো জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন হয়। সেসময় এর লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
Comments