ইসরায়েলি সেনাপ্রধান নেতানিয়াহুকে বন্দিবিনিময়ের প্রস্তাব মেনে নিতে বললেন

বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে চলমান বন্দিবিনিময় প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনা বন্দিদের জীবনের জন্য "গুরুতর ঝুঁকি" তৈরি করছে। সোমবার (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলি সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে এই আহ্বান এমন সময়ে এসেছে যখন বন্দিদের পরিবারগুলো ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করছে যেন দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌঁছে প্রিয়জনদের মুক্ত করা যায়।
এর আগে সব জিম্মি মুক্তির জন্য অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে গত বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তিনি গাজা নগরী দখল ও এর বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও চালিয়ে যেতে বলেন।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি হয়তো নতুন শর্তে কোনো চুক্তি খুঁজছেন। তবে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় দেওয়া যে প্রস্তাবটি সাম্প্রতিক সময়ে হামাস গ্রহণ করেছে, তা আগের ইসরায়েলি সমঝোতার সঙ্গেই অনেকাংশে মিল রয়েছে। এখন এ বিষয়ে নেতানিয়াহুর আনুষ্ঠানিক জবাবের অপেক্ষা করছে মধ্যস্থতাকারীরা।
ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল ১৩–তে দেওয়া বক্তব্যে সেনাপ্রধান জামির বলেন, "একটি প্রস্তাব টেবিলে রয়েছে, এখনই তা গ্রহণ করা উচিত। সেনাবাহিনী এর বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি করেছে, এখন সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর হাতে।"
তিনি গাজা নগরী দখল পরিকল্পনা নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জামির বলেন, "সেনাবাহিনী গাজা দখলে সক্ষম। তবে এই অভিযান জিম্মিদের জীবনের ওপর মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে।"
এদিকে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের পরিবারের পক্ষ থেকে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, "সেনাপ্রধান ইসরায়েলি জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবি প্রতিফলিত করেছেন। সেই দাবি হলো, একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হোক, ৫০ জন জিম্মি ফিরে আসুক এবং যুদ্ধ শেষ হোক।"
ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, হামাসের কাছে এখনও ৫০ জন জিম্মি রয়েছে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত। অন্যদিকে ইসরায়েলি কারাগারে ১০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আটক আছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব বন্দি নিয়মিত নির্যাতন ও চিকিৎসা অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
এর আগে গত শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজা নগরী দখলের সেনা পরিকল্পনায় অনুমোদন দেন। তিনি অঙ্গীকার করেন, ব্যাপক গোলাবর্ষণ হবে এবং মানুষকে স্থানচ্যুত করা হবে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২–এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রস্তাবে সীমান্তের কাছে সেনা পুনর্বিন্যাস, মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ, ৬০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং দুই ধাপে বন্দিবিনিময়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে প্রথমে ১০ জন জীবিত জিম্মি ও ১৮টি ইসরায়েলি মরদেহ মুক্তি পাবে, বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হবে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ৬২ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বিধ্বস্ত এই উপত্যকা এখন দুর্ভিক্ষের মুখে।
Comments