মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগ আকর্ষণ আগামী বাজেটের প্রধান লক্ষ্য

অর্থ বিভাগ আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারকে প্রাধান্য দিয়ে রূপরেখা ও নীতি নির্ধারণ করেছে আজ শনিবার (১৭ মে) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে। প্রতিশ্রুত সময়ে নির্বাচন হলে এটিই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র বাজেট।
দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভেঙে ২ জুন সোমবার ঘোষণা করা হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। সাধারণত জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা হয় বাংলাদেশে। ঈদুল আজহার ছুটির কারণে এবার বৃহস্পতিবারের বদলে সোমবার বাজেট ঘোষণা করা হবে। আর বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা। বর্তমান সাংবিধানিক নিয়মানুসারে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে।
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো টেলিভিশনে বাজেট ঘোষণা করছে কোনো অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট করা হচ্ছে। এজন্য কিছু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।'
এছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে নজর থাকবে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার ঋণ ছাড়ের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর আগামী অর্থবছরের বাজেটে টাকার সংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে গেছে। তবে আইএমএফের শর্ত পালন করতে গিয়ে, বিশেষত বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়ায়, নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনার যে শর্ত আইএমএফ দিয়েছিল, সেখান থেকে অব্যাহতি পেয়েছে সরকার।
তবে এ দুটি খাতে ভর্তুকি সীমিত রাখতে হবে সরকারকে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ভর্তুকি বাবদ ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কারণে এ দুটি খাতের বকেয়া ভর্তুকি দায় প্রায় পুরোটাই মেটানো সম্ভব হবে। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ভর্তুকিতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। চলতি অর্থবছরে এ দুটি খাতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বাবদ ভর্তুকির পরিমাণও কমছে।
এবার বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাজেটে নতুন নতুন উদ্যোগ যুক্ত করা হচ্ছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি বেগবান করতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।
আগামী বাজেটের আকার চলতি বাজেটের তুলনায় কমানো হচ্ছে, যা দেশের স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম। মূলত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ কমিয়ে বাজেটের আকার ছোট করা হচ্ছে।
এবারের মোট বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২.৪০ লাখ কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এডিপিতে বরাদ্দ ২.৬৫ লাখ কোটি টাকা থেকে কমে ২.৩০ লাখ কোটি টাকা হতে পারে।
Comments