প্রতারনা করে বৃদ্ধার জমি দখল, প্রতিবাদে ভুক্তভোগী পরিবারের মানববন্ধন

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৬৫ বছরের বৃদ্ধা পারুল বেগম। স্বামী হাফিজুর রহমান মুন্সী মারা যান প্রায় সাড়ে ৪ বছর আগে। স্বামী মারা যাবার আগে মেয়ের বিয়ে হলেও এখন তার সংসারে রয়েছে ২ ছেলে, ২ ছেলের বউ ও ৪ নাতী-নাতনী।
কিন্তু স্বামী মারা যাওয়াই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় বৃদ্ধা পারুল বেগমের। সদর উপজেলার গোবরা মৌজার ৫০ শতাংশ জমির দখল নিতে ২০০৩ সালে তারই সতালু ভাবি জেসমিন আরা তাকে আসামী করে গোপালগঞ্জে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপরই শুরু হয় আদালতে দৌঁড়ঝাঁপ। সংসার সামলাবেন নাকি মামলা চালাবেন এমন দুইমুখী সংকটে পড়েন তিনি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আদালত তারপক্ষে রায় দিলেও উকিলের প্রতারনায় সেই জমি এখন হারাতে বসেছেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত অ্যাভোকেট মো: রবিউল আলম বলেন, পারুল বেগম আমার কাছে জমি বিক্রি করে বিভিন্ন সময় জমির দাম নিয়েছেন।
এ জমি ফেরতসহ প্রতারক অ্যাভোকেট মো. রবিউল আলমের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করে ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা।
আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে শহরের জেলা প্রশাসকের কায্যালয়ের সামনের সড়কের উপর দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে ভুক্তভোগী পরিবারটি। এসময় তারা জমি ফেরতসহ প্রতারক অ্যাভোকেট মো. রবিউল আলমের বিচারের দাবীতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগমসহ তার পরিবারের ১১ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন চলাকালে ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগম বলেন, সদর উপজেলার ১১৬ নং গোবরা মৌজার ২৮৮৯ খতিয়ানের ৩০৮৯ খতিয়ানের ৮৩৭ নং দলিলের ৫০ শতাংশ জমির মালিকানা তার নামে। পরে এ জমির মালিকানা নিয়ে সতালু ভাবি জেসমিন আরা আমার নামে মামলা দায়ের করেন। এমে মামলা চালাতে আমি আমার আপন ছোট ভাইয়ে শ্যালক অ্যাভোকেট মো. রবিউল আলমের কাছে যাই। মামলায় আদালত আমার নামে রায় দেয়।
কিন্তু মামলা চলাকালে অ্যাভোকেট মো. রবিউল আলম প্রতারনা করে মামলার বাদী জেসমিন আরার নামে ২২ শতাংশ, অ্যাভোকেট মো. রবিউল আলম আমাকে ভুল বুঝিয়ে পাওয়ার অব এ্যাটর্নী করে তার নামে ৩২ শতাংশ এবং তার স্ত্রী তানিয়া আক্তারের নামে ২৬ শতাংশ জমি লিখে নেয়। এছাড়া আমার ছেলের কাছে ভুয়া দলিল দিয়ে ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ নিয়ে অ্যাভোকেট মো. রবিউল আলমের কাছে জানতে গেলে উকিলবারের ভিতর আমাকে ও আমার ছেলেকে মারধর করে। এ ঘটনার বিচার চেয়েও কোন প্রতিকার তো পাইনি উল্টো আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও জীবননাশের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় আমি আমার জমি ফেরতসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।
ভুক্তভোগীর ছেলে মো. মানিক মুন্সী বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমাদের উপর হামলা ঘটনা ঘটে। এসময় গর্ভবতী অবস্থায় আমার স্ত্রীকে মাধর করে বাড়ী ভংচুর করা হয়। আমাকে জীবন নাশের হুমকি দিলে ভয়ে আমি স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে শ্বশুর বাড়ীতে অবস্থান নেই। এসময় আমার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করে। এছাড়া ওই উকিল আমার কাছে ভুয়া দলিল দিয়ে ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি আমি সাড়ে ১৫ লাখ টাকার একটি চেকের মামলা দিলেও ওই উকিল আমাকে না জানিয়ে আসামীদের সাথে রফাদফা করেন। আমি এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাই।
ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগমের জামাতা বলেন, আমার শ্বাশুড়ী আদালত থেকে রায় পেলেও অ্যাভোকেট মো. রবিউল আলম প্রতারনা করে জমি লিখে নিয়েছে। আমরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও কোন বিচার পাচ্ছি না। জেলা প্রশাসক ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবী জানাই আমরা যেন সুষ্ঠু বিচার পাই।
এব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত অ্যাভোকেট মো: রবিউল আলম বলেন, এ জমি নিয়ে তারই সতালু ভাবি জেসমিন আরা মামলা দায়ের করেন। এরপর তিনি আমাকে প্রথমে পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দেয়। পরে আমার কাছে জমি বিক্রি করেন। তার জমি আমি প্রতারণা করে নিয়েছি এটা পুরোপুরো মিথ্যা।
তিনি আরো বলেন, তিনি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছিলো। কিন্তু কাগজপত্রে আমি এসব জমি পাই। পারুল বেগম আমার কাছে জমি বিক্রি করে বিভিন্ন সময় জমির দাম নিয়েছেন।
Comments