অন্ধকার থেকে আলোর দেখা পেল শেবাচিমের কার্ডিওলজি বিভাগ

"অন্ধকার থেকে আলোর দেখা পেল শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ"। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব, পুরনো অবকাঠামো এবং জনবলের স্বল্পতা। মুমূর্ষু হৃদরোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা প্রদানে সুযোগ না থাকা কার্ডিওলজি বিভাগের কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণ এখন দৃশ্যমান।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) অব্যবস্থাপনা ও দূরাবস্থার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত মেশিন বিকল থাকায় তীব্র গরমে চরম দুর্ভোগে ছিল রোগীরা । সক্ষমতার ৪ থেকে ৫ গুন রোগী ভর্তি থাকত এই ওয়ার্ডে। এছাড়া রয়েছে চিকিৎসক ও চতুর্থ শ্রেনীর জনবল সংকটও।
একাধিক গনমাধ্যমে কর্তৃপক্ষের অসহযোগীতা ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ রোগী ও স্বজনরা মতামত প্রকাশ করলেও দীর্ঘ বছরেও ফেরনী হাসপাতালের হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বিভাগের অবস্থা। সমস্যা সমাধানের আশ্বাসের বানী শুনিয়েছে হাসপাতালে দায়িত্বপালন করা সব পরিচালকরা।
২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল দুই তলা বিশিষ্ট আইসিও নতুন ভবন উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় তলায় স্থানন্তর করা হয় করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বিভাগ। ৩৩ বছর আগে শুরু হওয়া ইউনিট টি বেশি সময় ধরেই ছিল নিজে অসুস্থ।
সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেলের সিসিইউ বিভাগে সরকারী খাতা কলমে মোট ৮ টি শয্যা থাকলেও পরে তা ১২টিতে উন্নিত করা হয়। এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকত ৪ থেকে ৫গুন বেশী । শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতেও চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা ।
হাসপাতালের মূল ভবন থেকে আলাদা ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থানন্তরের পর ৮টি শীতাতপ মেশিন স্থাপন করা হয়। বছর দুয়েক পর সবগুলো বিকল থাকায় অসহ্য গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে শুরু করে রোগীরা । তাছাড়া ওই বিভাগের গুরুত্বপূর্ন এনজিওগ্রাম মেশিনটিও দীর্ঘদিন যাবৎ নস্ট । অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্সদের অসহযোগিতা ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্ধতা চরম আকার ধারন করে হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)।
দীর্ঘদিন পর শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে চালু হতে যাচ্ছে। যা বরিশালের মানুষের প্রাণের দাবী ছিল বহু দিনের।
বর্তমান হাসপাতাল পরিচাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: মশিউল মুনীর বহুল প্রতিক্ষীত কাজটি সম্পাদন করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল।
শের-ই বাংলা মেডিকল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. অসিম বিশ্বাস জানান, আধুনিকায়নের পাশাপাশী রক্ষণাবেক্ষণটাই জরুরী যেটা এখানে নিয়োমিত করা হয় না। যার কারনে কিছুদিন পরই সেই সাবক স্থানে চলে যায় এই আধুনিকায়নের জিনিস গুলো। এজন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার দরকার যা এখানে নেই। তাৎক্ষনিক একটি মেশিন নস্ট হলে সারাবার মত কেউ থাকে না। দিনের পর দিন চিঠি চালাচালি করতে করতে মেশিন গুলো অকেজো হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, একটি বিভাগ পরিচালনা করেন ৩টি সরকারী প্রতিষ্ঠান এটা আরএকটি বিড়ম্বনা। এগুলো একক ভাবে সমাধান কর জরুরী। এখন যে আধুনিক মানে নতুন করে হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) সাজানো হয়েছে এখানে নতুন করে আধুনিক মানের ২২ টি বেড রাখা হয়েছে স্থান সংকুলান হওয়ায় রোগীকে মেঝেতেও রাকতে হচ্ছে। তাছাড়া বড় বিষয় হচ্ছে সিসিউ থেকে সাধারণত গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা যেখানে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে বেড সংকট এবং জনবল সংকট।
তিনি জানান বর্তমানে এই বিভাগটিতে ৮ জন রেজিস্ট্রার ও মেডিকেল অফিসার দিয়ে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে । যেখানে প্রফেসর সহ ১২ থেক ১৪ জন মেডিকেল অফিসার দরকার। বর্তমানে ৩৪ জন নার্স থাকলেও ৫০ থেকে ৬০ জন নার্স ৩ ভাগে ২৪ ঘন্টা দরকার। নেই পর্যাপ্ত চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ৮ জন তিন বেলা ডিউটি করে, কম হলেও দরকার ১৮ থেকে ২০ জনের।
এছাড়া ডা. অসিম বিশ্বাস জানান, হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের বড় সমস্যা হল সিকিউরিটি দুই জন আনছার দিয়ে ২৪ ঘন্টা ডিউটি পালন করা সম্ভব নয়। এ কারনে রোগীরে সাথে যে ভিজিটর থাকে তাদের কারনে ঠিক ভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানায়, আধুনিক মানে নতুন করে হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) আধুনিক মানের নতুন বেড, কার্ডিয়াক মনিটর, অক্সিজেন, সেন্টাল এসি, ৪টি নতুন টয়েলটে নির্মান, দেয়ালের পলেস্তারা ঠিক করা সহ বিভিন্ন আসবাপত্র পরিবর্তন করা হয়েছে।
আগামীকাল সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকালে আধুনিক মানে নতুন এই হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) উদ্বোধন করা কথা রয়েছে।
Comments