দর্শনা হল্ট স্টেশনে স্টপেজ পেল ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, আনন্দের বন্যা এলাকাবাসীর
চুয়াডাঙ্গা জেলার শিল্পনগরী দর্শনা হল্ট রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী সুন্দরবন আপ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১২টা ১২ মিনিটে প্রথম স্টপেজ পাওয়া দর্শনা পৌরবাসী ছিল আনন্দে উদ্বেলিত।
বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে ছাত্র, যুবক, বৃদ্ধসহ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ এই শুভক্ষণের স্বাক্ষী হতে রাত জেগে জড়ো হয়েছিল দর্শনা হল্ট স্টেশনে। এ উপলক্ষ্যে হল্ট স্টেশনকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। শুধু তাই নয়, ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে রাতে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। গভীর রাতে দর্শনার হল্ট স্টেশনে ঢাকাগামী সুন্দরবন আপ এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্লাটফর্ম স্পর্শ করলে আনন্দিত ছাত্রজনতা শ্লোগান দিয়ে আগত যাত্রীদের অভিনন্দন জানায়। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা ট্রেনের লোকোমোটিভ চালক, পরিচালক ও সকল স্টাফকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় এবং তাদের হাতে রাতের খাবার তুলে দেয়। দর্শনাবাসীর আনন্দে শরীক হতে পেরে তারাও উচ্ছাস প্রকাশ করে। আয়োজকরা স্টপেজের প্রথম দিনের সকল ভাগ্যবান যাত্রীকেও ফুল ও খাবার দিয়ে বরণ করে নেয়।
উল্লেখ্য যে, ট্রেনটির ন্যায় সংগত এই স্টপেজ পেতে দর্শনাবাসীকে আন্দোলনের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। দর্শনার অধিবাসী সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর রেলে পথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েও তার অনীহার কারনে বারবার দাবী তুললেও দর্শনাবাসী বঞ্চিত হয়। এরপর চিঠি চালাচালি, স্মারকলিপি প্রদান, অফিসে অফিসে ধর্ণা কোন কিছুতেই কাজ না হওয়ায় সর্বশেষ ট্রেন থামিয়ে ছাত্রজনতা আন্দোলন শুরু করে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় ছাত্র আন্দোলনের ডাক দিলে দর্শনার সর্বস্তরের জনতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের সাথে যোগ দিলে আন্দোলন নতুন রূপ পায়। ছাত্ররা বারবার ঢাকায় গিয়ে কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে ধর্ণা দিলে এক পর্যায়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দর্শনা হল্ট স্টেশনে স্টপেজের ঘোষনা দেয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক তানভির রহমান অনিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিজয় উৎসব ও মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৌহিদ হোসেন, ছাত্রদলের কলেজ শাখার পলাশ আহাম্মেদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দর্শনা থানা সভাপতি লোকমান হোসেন, সাবেক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আবিদ হাসান রিফাত, থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সরোয়ার হোসেন, দর্শনা ডি এস মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোল্লা শফি উদ্দিন, থানা যুবদলের সভাপতি জালাল উদ্দীন লিটন, রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জাহিদুল ইসলাম, বিএনপির সমন্বয়ক ইকবাল হোসেন, জামায়াতের দামুড়হুদা উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি মাওলানা আব্দুল খালেক, জামায়াতের দর্শনা পৌর যুব বিভাগের সভাপতি তানজিল হোসেন, বিএনপির সমন্বয়ক এনামুল হক শাহ মুকুল, সমন্বয়ক মশিউর রহমান, ট্রেনযাত্রী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আজিজুর রহমান, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট।
সভায় বক্তারা আগামীতে দর্শনার সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। ট্রেনটি প্রায় ১০ মিনিট অবস্থানের পর ঢাকার গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
এ সময় ট্রেনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লোকো মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন, সহকারী লোকো মাস্টার আবু বক্কর সিদ্দিক, পরিচালক আতিকুর রহমান।
সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতির প্রথম দিনে দর্শনা হটস্টেশনের জন্য ১৫ টি টিকিট বরাদ্দ থাকলেও অর্ধশত যাত্রী বিভিন্ন স্টেশন থেকে বরাদ্দকৃত ট্রেনের টিকিট কেটে দর্শনা স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে। তবে দর্শনাবাসীর দাবি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি দর্শনা হল্ট স্টেশনের বরাদ্দকৃত আসন আরো বাড়ায় তাহলে যাত্রীরা সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
Comments