ঝুঁকিপূর্ণ পুল ও রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার, জনমনে ফিরছে স্বস্তি

পিরোজপুরের নেছারাবাদে স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে দীর্ঘদিন অবহেলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পুল এবং রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। উপজেলার ১নং বলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের ঝুঁকিপূর্ণ পুলগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বনির্ভর আন্দোলনের চেতনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল বেরুনী সৈকতের সমর্থকদের নেতৃত্বে তরুণ ও যুবকরা এ উদ্যোগ নিয়েছে।
বলদিয়া ইউনিয়নের জরাজীর্ণ এসব পুল ও রাস্তার কারণে বর্ষা মৌসুমে চলাচল ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটেছে, ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে গ্রামের মানুষকে। অথচ সরকারি উদ্যোগের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে এসব যোগাযোগ ব্যবস্থা অবহেলিত ছিল। কিন্তু স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজস্ব অর্থে সংস্কার শুরু করায় এখন এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও আনন্দ ফিরে এসেছে।
প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এসব তরুণ ও যুবকরা। ইতোমধ্যে ছয়টি পুল সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। সংস্কার কাজে অংশ নিচ্ছেন মো. সাইফুল ইসলাম, শরিফ মাসুদ পারভেজ, মহিউদ্দিন, ছালেক মিয়া, রুহুল আমিন, জাহাঙ্গীর, হাছান, সবুজ, পিয়াস, বুলেট, আলাউদ্দিন, সুলতান মিয়া ও ওসমান গনি প্রমুখ। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে গ্রামের রাস্তা-ঘাট ও পুলের চেহারা।
স্থানীয়রা জানান, যুব সমাজের এমন নিরলস প্রচেষ্টা শুধু গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেই নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতিরও দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। "যুবকরাই দেশের আসল সম্পদ, তারা চাইলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।" এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা যদি এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করেন, তবে অল্প দিনের মধ্যেই পুরো ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। নেছারাবাদের এই তরুণদের মহৎ উদ্যোগ আজ সমগ্র দেশের যুব সমাজের জন্য এক প্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
উদ্যোক্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চাকরির সুবাদে বরিশালে থাকি। তবে শুক্রবার এলেই মন টেনে নিয়ে যায় আমার গ্রামের মাটি, আমার বলদিয়ায়। তাই ক্লান্তি ভুলে ছুটে আসি ভাঙা সেতু আর জরাজীর্ণ রাস্তার পাশে দাঁড়াতে। শুধু টাকা দিয়ে নয়, আমি নিজেও শ্রম দিয়ে কাজ করি। আমার এই সামান্য প্রয়াসে যখন গ্রামের যুব সমাজকে সাথে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তখন এক নতুন উদ্দীপনা পাই। এখন প্রায় ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের দল আমরা একসঙ্গে প্রতি শুক্র ও শনিবার নিয়মিত কাজ করছি। গ্রামটা আমাদের, তাই উন্নয়নও আমাদের হাতেই করতে হবে—এমন বিশ্বাস থেকেই আমরা এই পথচলা শুরু করেছি।
নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আলবেরুনী সৈকত বলেন, নেছারাবাদ উপজেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন হলো বলদিয়া ইউনিয়ন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থেকে গেছে। বিএনপি সরকারের আমলে কিছু উন্নয়ন হলেও গত ১৭ বছরে এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাই আমরা সকলে একত্রিত হয়ে এই অবহেলিত ইউনিয়নকে অন্তত চলাচলযোগ্য করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করায় বলদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বলদিয়া ইউনিয়নের ভাঙা পুল ও রাস্তা সংস্কারের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার উদ্দেশ্যে তারা আমার কাছে লিখিত আবেদন করেছে। এটি সত্যিই একটি মহৎ উদ্যোগ। আমাদের অনুমতি নিয়েই স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাঠের সেতুটি সংস্কার করছেন।
Comments