নববধূকে না নিয়েই জরিমানা দিয়ে ফিরতে হলো বরযাত্রীকে

দুপুরে বরযাত্রী নিয়ে বরপক্ষ কনের বাড়িতে আসলে তাদের আপ্যায়ন শেষ করা হয়। ঠিক সেইসময় এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড় দুলালী গ্রামে।
অস্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশনে দেয়া নাম ও বয়স পরিবর্তন করে পাশ্ববর্তী উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ এনে বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়েছিলো। তার পর ও নববধূকে না নিয়েই ফিরতে হলো বরযাত্রীকে।
একইসাথে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে বাল্যবিয়ের আয়োজন করায় ভ্রাম্যমান আদালত বর এবং কনের বাবাকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার জরিমানা করেছে।
পুত্র জানায় জানায়, ওই গ্রামের বাসিন্দা মাজেদ আলী খন্দকারের ছেলে মোস্তফা খন্দকারের ১৬ বছর বয়সের মেয়ে ও বাউরগাতি জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অস্টম শ্রেনীর ছাত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে একই উপজেলার নলচিড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুন মৃধার ছেলে ঢাকার একটি কোম্পানীতে কর্মরত অহেদ হোসেন মৃধার বিয়ে ঠিক হয়। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আজ বুধবার দুপুরে বরপক্ষ বরযাত্রী নিয়ে দুপুরে কনের বাড়িতে আসেন। এরপর তাদের আপ্যায়ন শেষ করা হয়।
গৌরনদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সুপারভাইজার নারায়ন চন্দ্র দে জানান, বাল্যবিয়ের বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে জানতে পেরে তাৎক্ষনিক উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান।
এসময় কনের বাবা তার মেয়ের একটি জন্মসনদ প্রদর্শন করেন। যেটি পাশ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গত মাসের ২৭ আগস্ট উত্তোলন করা হয়েছে। ওই জন্মসনদে তার মেয়ের স্কুলে দেয়া নাম ও বয়স পরিবর্তন করে ১৯ বছর দেখানো হয়েছে। কিন্তু স্কুলের কাগজপত্র যাচাইকালে কনের বয়স ১৬ বছর প্রমানিত হয়। একপর্যায়ে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে বাল্যবিয়ে আয়োজনের বিষয়টি কনের বাবা ও বর স্বীকার করায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের দুইজনকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একইসাথে মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগে এ বিয়ে সম্পন্ন করা হবে না মর্মে উভয়ের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকা নেয়া হয়। পরবর্তীতে বরযাত্রীরা যে যার মতো করে তাদের বাড়িতে চলে গেছেন।
পাশাপাশি বিষয়টি নজরদারির জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউপি সচিব ও গ্রামপুলিশকে জিম্মা প্রদান করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান জানান, ভূয়া জন্ম নিবন্ধন করা ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি জনস্বার্থে উপজেলা প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Comments