ফরিদপুর রেকর্ড অফিসের রেকর্ড রক্ষক মাসুদ ঘুষের কিং

ফরিদপুর রেকর্ড অফিসে যেন ঘুষের একটি খোলা বাজারে পরিণত হয়েছে। খোদ রেকর্ড রক্ষক মাসুদ আলী মোল্লা-র বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গুনে গুনে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। বিভিন্ন উপজেলার ভুক্তভোগীরা মাসুদ আলী মোল্লার অবিলম্বে অপসারণ এবং আইনি ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
সরেজমিনে যা দেখা গেলো, ফরিদপুর রেকর্ড অফিসের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন। এই জায়গাটা রেকর্ড রুমের বদলে যেন ঘুষের এক 'বাজার' পরিণত হয়েছে। একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, মাসুদ আলী মোল্লার নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা সহজ-সরল লোকজনের কাছ থেকে চুক্তিতে টাকা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর তারা কাজ না করে বরং আরও অতিরিক্ত টাকা দাবি করে।
ভাঙ্গার এক ভুক্তভোগী হাসান জানান, একটি কাগজ ওঠানোর জন্য তিনি তিন দফায় ৮ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি কাগজটি পাননি। এরপর মাসুদ আলী মোল্লা আরও ৪ হাজার টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দেওয়ার পরও কাজ না হওয়ায় অবশেষে মাসুদ আলী ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু টাকা বা কাজ কোনোটাই তিনি পাননি।
বোয়ালমারীর বাসিন্দা মামুন বলেন, দুটি দলিল ওঠাতে গিয়ে তাকে প্রথমে ৫ হাজার এবং পরে আরও ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করা সম্ভব নয়।
এছাড়াও, নগরকান্দার বাবু নামের একজন জানান, মাসুদ আলী তার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও কাজ করে দেননি। ভাঙ্গার সাহেব আলী ৯ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও একই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। তিনি টাকা ফেরত পাননি এবং তার কাজও হয়নি। মধুখালীর ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুল করিম এবং সদরপুরের কৃষক আবুল কালামও যথাক্রমে ৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজ না হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, মাসুদ আলী মোল্লার আসল নাম মোঃ শাহাবুদ্দীন মোল্যা। তার বাবার নাম সুলতান মোল্যা এবং বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদাহ ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামে। প্রায় ২০-২৫ বছর আগে তিনি মানিকদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোমবাতি মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। গ্রামবাসী বিস্মিত যে কীভাবে তার নাম মাসুদ আলী মোল্লা হলো। চাকরি জীবনেই তিনি তিন কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী এটাকে 'আলাদিনের চেরাগ' পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন।
রেকর্ড রক্ষক মাসুদ আলী মোল্লার বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফোন রিসিভ করলেও সাংবাদিকের পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কল বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং নম্বরটি ব্লক করে দেন। অন্য নম্বর থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি মাসুদ আলী মোল্লাকে তিন দিনের মধ্যে জবাব দাখিল করতে বলেছেন। তিনি বলেন, যদি উপযুক্ত জবাব না পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীরা মাসুদ আলী মোল্লার কঠোর শাস্তি এবং অবিলম্বে তাকে পদ থেকে সরিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
Comments