শেবাচিমে দুই পক্ষের আন্দোলনে থমথমে পরিস্থিতি

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্ম ক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে ডাক্তার চিকিৎসক এবং নার্সদের আন্দোলন শুরু করেছে। এদিকে স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলন থেকে সড়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংগঠক মহিউদ্দিন রনি দাবি করেছেন আন্দোলন ব্যাহত করতে হাসপাতালে স্টাফরা তাদের উপর হামলা করেছে। হাসপাতালে এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। দ্রুত সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক।
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টায় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটোকে অবস্থান নেয় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মেডিসিন বিভাগের ভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল শুরু করে তারা। মিছিলটি হাসপাতাল চত্বর প্রদক্ষিণ করে প্রধান সড়কে যায়, সেখান থেকে ফিরে হাসপাতালের প্রধান ফটোকের গেটে সমাবেশ করে।
শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সৌমিক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, গত ১৮ দিন যাবত তারা নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন, চিকিৎসকদের উপর শিক্ষার্থী নামধারীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপদস্ত করেছে। এ অবস্থায় শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এ অবস্থায় চিকিৎসক নার্স কর্মকর্তা কর্মচারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।
শেবাচিম হাসপাতাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে সকল শ্রেণীর কর্মচারীরা। যেকোনো সময় তাদের উপর চড়াও হয় নামধারী শিক্ষার্থীরা। যার কারণে কর্মস্থলে সকল ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার।
এদিকে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিছিল শেষে আন্দোলনরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে মেডিকেল স্টাফদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ৷ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে গত বুধবার রাতে স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলন থেকে সড়ে দাড়িয়ে প্রত্যাহার করেছে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি অগ্রগতি দৃশ্যমান করতে আগামী ৩০ কার্য দিবস সময় বেধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছে।
এবিষয়ে বিএম কলেজ শিক্ষার্থী সংগঠক সাব্বির আহমেদ বলেন, যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা নিরসনে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে সেহেতু এই আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরিশাল বাসী সুবিধার্থেই আমরা আন্দোলন করেছিলাম। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পক্ষে মহাপরিচালক এই সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাই আমরা আগামী ৩০ কর্ম দিবস তাদের সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আমরা ফের আন্দোলনে যাব।
এদিকে অনশনরত শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। পরে হাসপাতালের মেইন ফটকের গেট খুলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সংগঠক মহিউদ্দিন রনি দাবি করেছেন আন্দোলন ব্যাহত করতে হাসপাতালে স্টাফরা তাদের উপর হামলা করেছে এবং অনশনরত শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়া হয়েছে। এ সময় বেশকিছু শিক্ষার্থীদের উপর স্টাফরা হামলা করেছে। যাতে অনেকেই আহত হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার বেল্লাল হোসাইন বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে উত্তেজনা কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছর সেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রন করেছি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের ৩ দফা দাবি যৌক্তিক দাবি করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা একেএম মশিউল মুনীর বলেন, দ্রুত সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডাক্তার কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ডাক্তারসহ মেডিকেল স্টাফরা সব সময় সেবা দেওয়ার লক্ষ্যই কাজ করে চলেছে। তার মধ্যেও কিছু বিশৃংখল ঘটনা ঘটছে। যাতে করে তাদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
Comments