চট্টগ্রামে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ‘চোখ রাঙানি’

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আরও ১৮ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, করোনায় একদিনে ৬০টি নমুনা পরীক্ষা করা হলেও নতুন করে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে চিকুনগুনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত একদিনে এই রোগের 'শিকার' হয়েছেন আরও ২২ জন।
রবিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া ওই বৃদ্ধের নাম শেবু চরণ ভৌমিক (৭৪)। তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলার ৩ নম্বর ছোবহানবাগ ওয়ার্ডের মন্দির রোড এলাকার বাসিন্দা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বৃদ্ধকে শনিবার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রামের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেদিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে 'ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং মাল্টি-অর্গান ফেইলিউর' উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, আমাদের কাছে যে পরিমাণ জ্বরের রোগী আসছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশই চিকুনগুনিয়ার লক্ষণধারী। পরীক্ষার খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে ল্যাবে যাচ্ছেন না। তাই লক্ষণ বিবেচনায়ই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বারে এখন চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গু রোগীই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। যা মশা থেকেই সৃষ্ট রোগ।
চট্টগ্রামে এ নিয়ে চলতি বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১১ জনে। যাদের মধ্যে পুরুষ ৪৪২ জন, নারী ২৩৬ জন এবং শিশু ১৩৩ জন। অন্যদিকে, একইসময়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। যাদের মধ্যে ৭ জনই পুরুষ।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশা বাহিত ভাইরাল রোগ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২২ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬৪ জনে।
অন্যদিকে, একই সময়ে করোনাভাইরাসের ৬০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে এদিন কারও শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণুর অস্তিত্ব মেলেনি।
চলতি মাসের ৪ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট ২২৫ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ১১৬ জন পুরুষ ও ১০৯ জন নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিহ্নিত উৎস ধ্বংস না করে শুধু ওষুধ ছিটানো বা হঠাৎ অভিযান দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। পুরো বছরজুড়ে মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, এডিস মশা এখন আর মৌসুমি আতঙ্ক নয়। এটি শহরের স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। সংক্রমণ, মৃত্যু, ওয়ার্ডভিত্তিক ঝুঁকি সবকিছুই বাড়ছে প্রতি বছর। কিন্তু সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া একই থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments