ঢাকা জার্নালের এক বছর: সত্যের অনুসন্ধানে আমাদের পথচলা
এক বছর, সময়ের হিসেবে খুব বড় নয়, কিন্তু একটি গণমাধ্যমের জন্য এটি এক কঠিন পরীক্ষা, এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ঢাকা জার্নাল তার প্রথম বছর পেরিয়ে দাঁড়িয়েছে এক উজ্জ্বল উপলক্ষের সামনে। ডিজিটাল গণমাধ্যমের অস্থির বাজারে, রাজনীতি ও অর্থনীতির টালমাটাল সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও দায়িত্বশীল তথ্য পরিবেশনের যে ব্রত আমরা ধারণ করে এগিয়েছি, তার মূল্যায়নের সময় এখন। এই প্রথম জন্মদিন তাই কেবল উৎসব নয়; এটি আত্মবিশ্লেষণ, আত্মশুদ্ধি এবং ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার দিন।
গত এক বছরে আমরা পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছি খবর। চেষ্টা করেছি রাজনীতি, অর্থনীতি, বিনোদন, খেলাধুলা, অপরাধ জগৎ, নগর ও গ্রামের বাস্তবতা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চাল-চিত্র এবং চলমান প্রবণতার তথ্য ও গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরতে। ডিজিটাল দুনিয়ায় যেখানে তথ্যের চেয়ে শোরগোল বেশি, সেখানে ঢাকা জার্নালের লক্ষ্য ছিল কখনোই কেবল 'ভাইরাল' হওয়া নয়; বরং তথ্যকে সৌন্দর্য ও সততার সঙ্গে সাজিয়ে মানুষের সামনে পৌঁছে দেওয়া।
সত্যকে উপস্থাপনের এই প্রয়াসই ছিল আমাদের প্রতিদিনের চর্চা। কারণ,সংবাদপত্র বা সংবাদপোর্টালের মূল শক্তি ভাইরাল হওয়ায় নয় - বিশ্বাসযোগ্যতায়। আমরা সেই বিশ্বাস রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম।
মূল্যবোধের পথ ধরে এগোনো
শুরু থেকেই আমাদের দল মূল্যবোধ ও আদর্শকে পাথেয় করেছে। প্রতিটি সংবাদ, প্রতিটি বিশ্লেষণ, প্রতিটি ভিডিও প্রতিবেদনে আমরা প্রয়াস করেছি মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি এক ধরনের নৈতিক দায়বদ্ধতা। সেই দায়বদ্ধতাকেই আমরা আমাদের যাত্রার মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছি।
এক বছর পূর্ণ করার এই সময়টি আমাদের কাছে আত্মবীক্ষণেরও বড় সুযোগ। আমরা বিনম্রভাবে স্মরণ করি এই পেশার পূর্বসূরিদের, যারা নিজেদের জীবনকে দায়বদ্ধ সাংবাদিকতার আলোয় আলোকিত করেছিলেন। তাদের সাহস, অধ্যবসায়, নির্ভীক অবস্থান আমাদের পথ দেখায়। একই সঙ্গে আমরা ফিরে দেখি বিগত এক বছরের ভুল-ভ্রান্তি, কোথায় আরও ভালো করা যেত, কোথায় উন্নতির সুযোগ রয়েছে, এসব স্বীকার করাই আমাদের পরবর্তী পথচলার ভিত্তি।
উদ্যোক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
ঢাকা জার্নাল শুধুই একটি নাম নয় -এটি একদল মানুষের শ্রম, মেধা, সৃজনশীলতা ও অবিরাম পরিশ্রমের ফল। প্রথম বছরের এই সাফল্যে তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁদের আস্থা, পরামর্শ ও নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা আমাদের পথকে করেছে আরও সুগম,আরও গতিশীল।
একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানো সহজ কাজ নয়। প্রতিটি সাফল্যের পেছনে আছে অসংখ্য অদেখা রাত-দিনের পরিশ্রম। তাই এই দিনে আমরা তাদের সকলকে গভীরভাবে স্মরণ করি।
পাঠক, দর্শক-শ্রোতাই আমাদের আসল শক্তি
সবচেয়ে বড় কৃতজ্ঞতা পাঠক ও দর্শকদের প্রতি। যাদের ভালোবাসা, আস্থা ও নিয়মিত সাড়া আমাদের এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে। মাত্র এক বছরে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করেছে যে, মানুষ আজও বস্তুনিষ্ঠতা চায়, সঠিক তথ্য চায়, চায় দায়িত্বশীল গণমাধ্যম।
তারা আমাদের অক্ষর, ভাষা, চিন্তা ও মনোভাবকে যে ভালোবাসায় গ্রহণ করেছেন, তা আমাদের বিশ্বাসকে আরও শক্ত করে। সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় সম্পদ পাঠকের আস্থা। এই আস্থা বজায় রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধতা
আমরা সব ধরনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে কেবল নিজের কথা বলার স্বাধীনতা নয়, বরং মানুষের কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা। আমরা সম্মান করি বহুত্ব, ভিন্নমত, যুক্তির সৌন্দর্য, মুক্তচিন্তা এবং বিজ্ঞানের আলো।
এই পৃথিবীকে বোঝা, ব্যাখ্যা করা ও উন্নত করার জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানমনস্কতা। ঢাকা জার্নাল সে পথেই এগোতে চায়। একই সঙ্গে আমাদের সাধনা বাংলা ভাষার উত্তরাধিকারকে সমৃদ্ধ করা। কারণ, ভাষা কেবল প্রকাশ নয়; এটি চিন্তার ভিত্তি, সভ্যতা বহনকারী।
সত্য আমাদের পথের আলো
এই এক বছরে আমরা যা সত্য বলে জেনেছি, অনুভব করেছি, তা-ই আমাদের আত্মপ্রত্যয়ের দীপ হয়ে জ্বলেছে। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা যতটুকু পেরেছি, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ভুল থেকে শিখেছি, সমালোচনা থেকে উন্নতির পথ খুঁজেছি। কারণ সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা কোনো দিনের নয়, এটি প্রতিদিনের কাজ।
আগামী দিনের অঙ্গীকার
ঢাকা জার্নালের এই এক বছরের অর্জন আমাদের পরবর্তী পথচলার প্রেরণা। আগামী দিনগুলিতেও আমরা পাঠক ও দর্শকের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে চাই, এবং প্রতিটি সংবাদে, প্রতিটি প্রতিবেদনে সেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। আমাদের প্রতিটি কাজ হবে মূল্যবোধনির্ভর, তথ্যনিষ্ঠ, যুক্তিনিষ্ঠ ও মানবিক। আমরা চাই, পাঠকের আস্থা আরও বাড়ুক। তাই এই প্রথম বার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার - ঢাকা জার্নাল থাকবে সত্যের পাশে, মানুষের পাশে, স্বাধীনতার পথে।
এই প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তাই শুধু অতীতের হিসাব-নিকাশ নয়; এটি নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের মুহূর্ত। আমরা জানি সামনে পথ আরও কঠিন, আরও প্রতিযোগিতামূলক। তবুও আমরা বিশ্বাস করি -সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বকে সঙ্গে রাখলে যেকোনো বাধাই অতিক্রম করা যায়।
ঢাকা জার্নাল চেষ্টা করবে মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে, সত্যের দর্পণ হয়ে দাঁড়াতে। আমাদের এই যাত্রায় যারা সঙ্গে আছেন, তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আগামী বছরগুলো হোক আরও শক্তিশালী, আরও সাহসী এবং আরও মানবিক।
লেখকঃ প্রধান সম্পাদক, ঢাকা জার্নাল
Comments