‘মিনেসোটা প্রোটোকল’ অনুসরণ করেই জুলাই শহীদদের শনাক্ত করবে সিআইডি
রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধের কাছে দাফন করা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অজ্ঞাত শহীদদের লাশ শনাক্তের কাজ আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ–সিআইডির প্রধান ছিবগাত উল্লাহ। তিনি জানান, সেখানে প্রায় ১১৪ জন শহীদকে দাফন করা হয়েছে এবং পুরো শনাক্ত–প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হবে।
রোববার সকালে রায়েরবাজার কবরস্থানে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের লাশ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি। ইতোমধ্যেই কবর খোলা ও দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য কবরস্থানেই একটি অস্থায়ী ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মরদেহ উত্তোলন, ডিএনএ পরীক্ষা এবং পরবর্তী সব ধাপ অনুসরণ করা হবে। স্বজনরা চাইলে পরিচয় নিশ্চিতের পর মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অথবা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ধর্মীয় মর্যাদা রক্ষা করে পুনঃদাফন সম্পন্ন করা হবে।
তিনি জানান, রাষ্ট্রের মাধ্যমে বেআইনি মৃত্যুর তদন্তের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নির্দেশিকা 'মিনেসোটা প্রটোকল' ব্যবহার করা হয়। এই গণহত্যার তদন্তেও সেই প্রটোকলই অনুসরণ করা হচ্ছে। সময় কত লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন আর্জেন্টিনার ফরেনসিক অ্যানথ্রোপোলজিস্ট লুইস ফনডিব্রাইডার। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা–ওএইচসিএইচআরের মাধ্যমে তিনি ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত ৪০ বছরে তিনি বিশ্বের ৬৫টি দেশে এ ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন বলে জানান সিআইডি প্রধান।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, লাশ উত্তোলন থেকে পোস্টমর্টেম, বোন বা টিস্যু সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি—প্রতিটি ধাপে সব স্টেকহোল্ডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই কাজে যুক্ত আছেন।
তিনি জানান, আবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১১৪টি কবর শনাক্ত করা হয়েছে, যা বাস্তবে কিছুটা কমবেশি হতে পারে। দেহাবশেষ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম ও ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে পুনঃদাফন করা হবে। স্বজনরা চাইলে মরদেহ গ্রহণ করতে পারবেন।
এ পর্যন্ত ১০ জন স্বজন ডিএনএ মিলিয়ে শনাক্তকরণের আবেদন করেছেন। আরও কেউ আবেদন করতে চাইলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। হটলাইনে যোগাযোগ করলে তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, কোন কবরে কে আছেন—এ বিষয়ে নিশ্চিত ধারণা নেই, তাই শনাক্ত–প্রক্রিয়ার সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই প্রক্রিয়ায় সব শহীদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে। প্রক্রিয়া চলাকালে দেহাবশেষের ছবি না তুলতে সংবাদকর্মীদের অনুরোধ জানান সিআইডি প্রধান।
জুলাই আন্দোলনে নিহত শতাধিক মানুষকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। সিটি করপোরেশন কবরগুলোর স্থান টাইলস ও মার্বেল দিয়ে ঘিরে পরিচিহ্নিত করেছে।
গত ২ আগস্ট রায়েরবাজার কবরস্থান পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, অনেক শহীদকে শনাক্ত করা যায়নি এবং শনাক্তকরণ নিয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগে অনেকে কবর খননে দ্বিধা প্রকাশ করলেও এখন প্রায় সবাই সম্মত হয়েছেন। পরিচয় মেলানো গেলে পরিবারের সদস্যরা চাইলে মরদেহ গ্রামের বাড়িতেও নিতে পারবেন।
Comments