দলগুলোর সহযোগিতা না পেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে: সিইসি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকায় দেখতে চান উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, মূল প্লেয়ারদের (রাজনৈতিক দল) সহযোগিতা না পেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে সভাপতি হিসেবে স্বাগত বক্তব্য দেন সিইসি। এ সময় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিন সকাল এবং বিকাল দুই দফা নিবন্ধিত ১২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি।
দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, 'দেখুন, খেলবেন আপনারা। আপনারা প্লেয়ার, আমরা রেফারির ভূমিকায়। প্রকৃত অর্থে একদম নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকায় থাকতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া রেফারির কাজ করা বড় মুশকিল। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, জাতির কাছে আমরা সুষ্ঠু সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে উপহার দিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা নিয়েই এ উপহার দিতে হবে।' তিনি আরো বলেন, 'এখন নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫৪টা। বড়-ছোট নেই, সব দলই আমাদের কাছে সমান।'
সিইসি বলেন, 'আমাদের অনেকগুলো অতিরিক্ত দায়িত্ব এসে পড়েছে—আউট অব কান্ট্রি ভোটিংয়ের দিকে যাচ্ছি, নির্বাচনি কাজে জড়িতদের ভোটের ব্যবস্থা, সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের ব্যবস্থা। আরেকটি বিষয় খুবই আলোচনায় আছে যে রেফারেন্ডাম একটা বিষয়, এখনো অফিশিয়ালি আমরা কিছু জানি না। এমনিতেই তো এক ধরনের বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে, একটি বিশেষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। তাই নরমাল ইলেকশনে আপনারা যতটুকু সহযোগিতা করেন, এই ইলেকশনে আরো বেশি সহযোগিতা লাগবে।' সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের বিষয়টিকে মুসিবত উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া পারব না। আপনাদের সহযোগিতা চাই।
সংলাপে নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি জানান নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, 'আমরা দেখছি ঢাকা পোস্টার দিয়ে ছেয়ে গেছে। অথচ আচরণবিধিতে আমরা পোস্টার নিষিদ্ধ করেছি। এসব পোস্টার নিজ উদ্যোগে সরাতে হবে।' তপশিল ঘোষণার আগেই পোস্টার সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করেন সিইসি।
এদিকে সংলাপে অংশ নিয়ে সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, 'যার টাকা আছে, সে-ই নির্বাচন করতে পারছে। একজন সাধারণ মানুষ, একজন সম্মানিত স্কুলশিক্ষক, যার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আছে, তিনি প্রার্থী হতে পারছেন না। অর্থাত্ আমরা পরোক্ষভাবে ধনী, লুটপাটকারী ও অর্থ আত্মসাত্কারীদের জন্যই সুযোগ তৈরি করছি।'
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, "আরপিওতে 'না' ভোটের বিধান শুধু একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো ভোটারের যদি তিন বা পাঁচ জন প্রার্থীর মধ্যে এক জনকেও পছন্দ না হয়, তাহলে কি সে মন্দের ভালো বেছে নেবে? তাই 'না' ভোটের বিধান সব আসনেই রাখার দাবি আমরা করছি।"
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, 'কিছু মহল এমনভাবে আচরণ করে, যেন তারা নির্বাচন কমিশনের ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এই বৈঠকের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে আশ্বস্ত হতে চাই।'
সংলাপে ৩২ দফা সুপারিশ তুলে ধরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনে পোস্টার বাদ দিলে পুরোনো বড় দলগুলো, যাদের মার্কা পরিচিত, তারা সুবিধা পাবে। নতুন বা কম পরিচিত দলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অনুরোধ করব—পোস্টার কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। বরং প্রস্তাব করছি, নির্বাচন কমিশন নিজেই নির্দিষ্ট সংখ্যক পোস্টার একরূপ সাইজ, ডিজাইন ও কালারে ছাপিয়ে দিতে পারেন। এতে ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং ভোটারদের কাছে প্রতীকের পরিচিতিও সহজ হবে।
নিরাপত্তা উদ্বেগ জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ডক্টর চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, কিছু দল চিহ্নিত সন্ত্রাসী ব্যবহার করছে। তিনি তপশিল ঘোষণার আগেই একটি নিরাপত্তা সিকিউরিটি অপারেশন করার দাবি জানান। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু জামানতের টাকা ৫০ হাজার করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়াও সংলাপে বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী প্রমুখ।
Comments