'এনসিপি সরকারি অথবা শক্তিশালী বিরোধী দলের জন্য লড়াই করবে'

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশের অন্যতম রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে হয় সরকারি দলে অথবা শক্তিশালী বিরোধী দলে যাওয়ার জন্য লড়াই করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চলের) সারজিস আলম।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দদের সাথে সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, জেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে করতে চায় এনসিপি। যদি এটি করতে পারি, তাহলে ফেব্রুয়ারিতেও যদি নির্বাচন হয়, সেক্ষেত্রে এনসিপি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে হয় সরকারি দলে অথবা শক্তিশালী বিরোধী দলে যাওয়ার জন্য লড়াই করবে। আমরা বিশ্বাস করি, ওই সাংগঠনিক শক্তিমত্তার দিকেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, যারা বেশি যোগ্য, দক্ষ তাদেরকে প্রধান্য দিয়েই কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে দলীয় লোক নিশ্চিত করা পর বিচার ব্যবস্থা দৃশ্যমান, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া হলে ৩০ নভেম্বরের পর নির্বাচনী প্রস্তুতির দিকে যাবে এনসিপি।
এনসিপি নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা যেন তাদের জায়গা থেকে এই অভ্যুথানের চিত্রগুলো ভুলে না যান। দিনে অন্তত ৫ মিনিট জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী ত্যাগের ভিডিও চিত্র ও ছবিগুলো তাদের চোখের সামনে যেন আসে। তাহলেই আশা করি, তারা এই লাইন থেকে বিচ্যুত হবেন না।
উপদেষ্টাদের গতানুগতিক কাজের সমালোচনা করে সারজিস আলম বলেন, কিছু কিছু উপদেষ্টা গতানুগতিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আমরা চাই অভ্যুথান পরবর্তী বাংলাদেশে রুটিন ভিক্তিক দায়িত্ব পালনের বাইরে তার মন্ত্রণালয়ের কি কি সংস্কার করেছেন, কি কি কাজ করেছেন, যেটা জনগণকে এখন ও আগামীতে সুফল এনে দিবে এটি তারা প্রকাশ্যে তুলে ধরুক।
তিনি বলেন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন যা দেখা যাচ্ছে, কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারে এ নিয়ে সেই দলের সাথে একটু বেশি উঠাবসা একটু বেশি আলাপচারিতা ও তাদের পক্ষে ঝুঁকে পড়া এই আচরণ কিছু কিছু উপদেষ্টার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। তবে সকল উপদেষ্টা নয়, কাউকে কাউকে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদদের লাশের উপরে রক্তের উপরে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। যেই যে দায়িত্বে থাকুক না কেন, একটি নির্বাচন দিয়ে চলে যাব বললেই যাওয়া যায় না। আপনি বাংলাদেশে থাকেন তাহলে দেশের মানুষকে, অথবা বিদেশে থাকলেও সেখানে বাংলাদেশের মানুষের মুখোমুখি হতে হবে। তারা যে দায়িত্বটা পেয়েছে তা সৌভাগ্যক্রমে। হয়তো তাদেরকে দায়িত্ব নিতে আহ্বান করা হয়েছে।
এনসিপি নেতা বলেন, আমরা তাদেরকে বলতে চাই, তারা যদি মনে করে কোন মতে নির্বাচনটা দিয়ে চলে যাব। তাহলে যাওয়ার পরে তারা আসার সময় যে শান্তি ছিল, তা পাবে না। কারন এটি ইতিহাসে এতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, এই অধ্যায় যখনই আসবে, তখনই তিনি আলোচিত হবেন। আমরা প্রত্যাশা করি, তারা যেন তাদের জায়গা থেকে সবসময়ই এই দায়িত্বকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মনে করেন।
এনসিপি নেতার মালিকানাধীন টেলিভিশনের অনুমতির বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, আমরা শুনেছি, বিএনপি জাময়াত স্বতন্ত্র সব মিলেই টিভির মালিকানা রয়েছে, কিন্তু কেন শুধু এনসিপিকে ফোকাস করা হয়েছে, তা মনে করি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা। বাংলাদেশে অভ্যুথানের পূর্বে অধিকাংশ মিডিয়া হাউস বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হতো। এটা তিক্ত সত্য, এটা হওয়া উচিত ছিল না। এটি পেশাদারিত্বে বাধা।
তিনি বলেন, এখন ৫০টি মিডিয়া হাউস থাকলে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, এই জায়গায় অন্তত ৪০টি মিডিয়া হাউস বিএনপি প্রভাব খাটাচ্ছে। আমরা চাই, এটি থেকে বেরিয়ে আসা হোক। মিডিয়া তাদের পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে কাজ করুক। কোনো একটি রাজনৈতিক দল খারাপ করলে সেটা বলবেন, ভালো হলেও সেটা বলবেন।
সমন্বয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসিফ মোস্তফা জামাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মো. আলাউল হকসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
Comments