গাজার চিকিৎসকরা না খেয়ে থেকেও চিকিৎসা দিচ্ছেন

গাজার চিকিৎসকরা যখন মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তখন নিজেরাই না খেয়ে মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ডা. মোহাম্মদ আবু মুগাইসিব। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা এমএসএফ -এর হয়ে দুই দশক ধরে কাজ করেছেন।
অসহ্য ক্ষুধায় আর টিকে থাকতে না পেরে তিনি সেপ্টেম্বরে গাজা ছেড়ে আয়ারল্যান্ডে আসেন। এখন নিরাপদে আছেন, কিন্তু সহকর্মীদের ফেলে আসার কষ্ট তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
ডা. মুগাইসিব বললেন, 'আমি বেঁচে আছি, এটা আনন্দের। কিন্তু আমার সহকর্মীরা এখনও গাজায় যুদ্ধ আর অনাহারের মধ্যে লড়ছে—এই ভেবে কিছু খেতে গেলেও আমার আর খাওয়া হয় না।'
বর্তমানে গাজার হাসপাতালগুলোতে আর কোনো সীট নেই—রোগীরা মেঝেতে পড়ে থাকে। ডাক্তার-নার্সরা শক্তি পেতে গ্লুকোজ খেয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আইসিইউতে একজন মারা গেলে তবেই আরেকজন রোগী ভর্তির সুযোগ পান। সর্বত্র রক্তের গন্ধ, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ।
ডা. মুগাইসিব যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিজের বাড়ি হারিয়েছেন, তাঁবুতে থেকেছেন, কখনো হাসপাতালে আবার কখনো অফিসের ফ্লোরে ঘুমিয়েছেন। তবু কাজ চালিয়ে গেছেন। প্রতিদিন মৃত্যুভয়ে কাতর থেকেছেন—রাস্তায় হাঁটলে মনে হতো আশপাশের যে কাউকে টার্গেট করা হতে পারে, তিনিও মারা যাবেন।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধু সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধেই কমপক্ষে ১৭টি ইসরায়েলি হামলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৬ হাজার, এর মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু।
ডা. মুগাইসিবের ভাষায়: 'এটা শুধু হামাসের বিরুদ্ধে নয়, পুরো জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। হাসপাতাল, স্কুল, বিদ্যুৎ, পানি—জীবনের প্রতিটি স্তরকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।'
আয়ারল্যান্ডে এসে দুই বছর পর প্রথমবারের মতো গোসল করেছেন তিনি। চারপাশে খাবার থাকলেও খেতে ইচ্ছা করে না। তিনি মনে করেন, গাজার ক্ষত শুধু শারীরিক নয়—সামাজিক, মানসিক, আবেগিক ও আধ্যাত্মিক। এই ক্ষত সারতে বিশ্বজুড়ে মানুষের সহায়তা প্রয়োজন হবে।
সূত্র:বিবিসি
Comments