সচিবালয়ে উপদেষ্টারা অসহায়: মির্জা ফখরুল

সচিবালয়ে উপদেষ্টারা অসহায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে 'সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত?' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সংগঠন 'অর্পণ আলোক সংঘ'।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে, স্বাস্থ্য শেষ হয়ে গেছে, এগুলোকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তো মানুষ লাগবে, সেই মানুষগুলো তো তৈরি করতে হবে আপনাকে। আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনি সেক্রেটারিয়েটে যাবেন, সেখানে গেলে ওই যে আমলারা বসে আছেন, তারাই সবকিছু নির্ধারণ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের উপদেষ্টা যারা দায়িত্ব পালন করছেন এখন, অনেক ক্ষেত্রেই তারা অসহায়। তারপরও আমরা আশা করি, তারা (উপদেষ্টারা) এতদিন যে চেষ্টা করেছেন, সংস্কারের যেসব কমিশনগুলো আছে, তারাসহ আমরা সবাই মিলে শুরু করতে পারি, যে শুরুটা দিয়ে আমরা একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেখুন, গ্রামের একজন স্কুল শিক্ষককে তার সমস্যা সমাধান করতে হলে ঢাকায় আসতে হয়। কেন?, সেটা জেলাতেই যথেষ্ট। কিন্তু ওই যে সিস্টেম, ওই সিস্টেমে যদি সেন্ট্রালে না আসে তাহলে ঘুষটা আসবে কোত্থেকে। এটাই বাস্তবতা। ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে। তাহলে যেই ব্যবস্থাতে অনিয়ম, বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারবেন না, এটা খুব ডিফিকাল্ট। আমাদের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে যেতে এমন সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে যেন জনগণ ন্যায়বিচার পায়।
তিনি আরও বলেন, এই যে সমস্যার কথা বললাম, সমাধানের পথ কী? এটা সিস্টেমের ওপর নির্ভর করবে। আমি যদি একটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করতে পারি, আমি যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি, এর মধ্য দিয়ে আমি যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পার্লামেন্ট গঠন করতে পারি, তাহলে সেখানে আমি জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব। আমি মনে করি, আপাতত এটা একটা ভালো পথ হবে, যেখানে গিয়ে আমি হয়তবা কিছুটা সমস্যার সমাধান করতে পারব।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানের পরেই যখনই আমরা নতুন করে রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন সংস্কার শুরু করেছি, তখনই তো বিবাদ, তর্ক-বিতর্ক শুরু করেছি।তর্ক-বিতর্ক তো হবেই, গণতন্ত্রে যেতে হলে। কিন্তু এমন জায়গায় যাচ্ছি মাঝে মাঝে, যে জায়গায় গিয়ে হতাশা এসে যায়।
আমাকে জোনায়েদ সাকি বারবার বলছিলেন, এমন কিছু বলবেন না যেটাতে হতাশা আসে। আমি হতাশাবাদী কখনও ছিলাম না, আমি হতাশাবাদী হতেও চাই না। কিন্তু এটা তো সত্য, হতে হচ্ছে। আমি যখন একটা প্রগতিবাদী সমাজ দেখতে চাই, আমি যখন মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা চাই, বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই, কিন্তু যদি দেখি, সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভিন্ন চিন্তা করা হচ্ছে, উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন তো হতাশা আসবেই।
আয়োজক সংগঠনের প্রধান বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, সাবেক সাংসদ রেহানা আক্তার রানু, অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজসহ স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।
Comments