ইরান যুদ্ধ চালিয়ে যাবে? নাকি আলোচনায় বসবে?

দু সপ্তাহের কথা বলে দু'দিন না যেতেই ইরানে হামলা করলো যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বি-টু বোম্বার দিয়ে হামলা করেছে আমেরিকা। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের মাস্তান ইরানকে এখন শান্তি স্থাপন করতে হবে। যদি তারা তা না করে, তাহলে ভবিষ্যতের আক্রমণ অনেক বড় এবং অনেক সহজ হবে।
যে ট্রাম্প মাসের পর মাস ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির পক্ষে কাজ করছিলেন, সেই তিনি ইরানে ইসরা্য়েলের হামলাকে তো সমর্থন করলেনই,নিজেও জড়িয়ে গেলেন যুদ্ধে।
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বি-টু বোম্বার দিয়ে হামলা করেছে আমেরিকা। দেশটির নাতাঞ্জ ,ইসফাহান ও ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ৩০ হাজার পাউন্ডের বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা দিয়ে হামলা করেছে আমেরিকা। ইরানের উপর জিবিইউ ৫৭ এ/বি বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা দিয়ে প্রায় ২০ টন ওজনের বোমা হামলা করেছে। ১৯৮০ -৮৮ সালের ইরাক - ইরান যুদ্ধের পর এটাই ছিল ইরানের উপর সবচেয়ে বড় হামলা।
প্রশ্ন হলো ইরান এখন কী করবে? পাল্টা হামলা করে প্রতিশোধ নিবে? নাকি শান্তি আলোচনায় বসবে। আমেরিকা প্রেসিডেন্ট নিজেই এখন ইরানকে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বভাবতই ইসরায়েল সবচেয়ে খুশি। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,"বিশ্ব আজ আতঙ্ক মুক্ত হয়েছে।" ইসরায়েল ইরানকে শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বানও জানিয়েছে এবং সেই সাথে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল প্রস্তত রয়েছে।
ইরান এর মধ্যেই পাল্টা হামলার হুশিয়ারি দিয়েছে এবং তা প্রতিরোধের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে ৫ টি যুদ্ধজাহাজ প্রস্তুত রেখেছে আমেরিকা। সৌদি আরবে আরও পঞ্চাশের অধিক যুদ্ধ বিমান বাড়িয়েছে। ইরান যদি পাল্টা হামলার প্রস্তুতি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ১৯ টি ঘাঁটিতে হামলা করে তবে যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হবে। তবে ইরানের পরিণতি হয়তো আরও খারাপ হতে পারে। এ কথা মানতেই হবে যে, আমেরিকার এফ-১৬, এফ -৩৫ ও ইসরায়েলের সাইবার হামলার মোকাবেলার শক্তি ইরানের নেই।
রাশিয়ার চেরোনোবিল পারমাণবিক বিস্ফোরণের মত এত ভয়াবহ রেডিয়েশন হয়তো নাতাঞ্জ পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে হবে না। কিন্তু ইরানের রেডিয়েশন ঝুঁকিও কম নয় বলেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে।
বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে মুসলিম দেশগুলোর এগিয়ে আসার আহবান জানানো হচ্ছে তা বাস্তবতার সাথে যায় না। তুরস্ক সহ কোন মুসলিম দেশ সরাসরি ইরানের পক্ষে এগিয়ে আসেনি এবং আসবেও না। তুরষ্ক নিজে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর সদস্য। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশগুলোর সাথে ইরানের তেমন কোন সখ্যতা নেই। পাকিস্তানকে হাতের মুঠোয় নিয়ে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সাথে গোপন আলোচনা করে আমেরিকা এই হামলা করেছে। বোঝাই যাচ্ছে যেভাবে আমেরিকা পাকিস্তানকে দিয়ে আফগানিস্তান ধ্বংস করেছে ঠিক একইভাবে আবার পাকিস্তানকে ব্যবহার করল ইরানের বিরুদ্ধে।
রাশিয়া এবং চীনও এই যুদ্ধে জড়িত হবে না। রাশিয়া তেলের দাম বাড়ার খুশিতে আছে। এবং এটাও দেখছে যে, পশ্চিমারা ইউক্রেন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে পশ্চিম এশিয়ায়। চীন ক্ষমতাধর হলেও নিজেদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সে পথে অগ্রসর হবে না।
মাটির নিচে ইরান যে ভূগর্ভস্থ মিসাইলের শহর গড়ে তুলেছিলো তা ধ্বংস করে দিয়েছে আমেরিকার বি- টু বোমারু বিমান। শান্তি আলোচনার বিপরীতে অন্য কিছু ভাবতে গেলে ইরানের আরও ক্ষতি হবে বলেই এখন ধারণা করা হচ্ছে।
Comments