শৈশবে শেখা ‘কালেমা’ জীবন বাঁচালো আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের

একটি মুসলিম পাড়ায় বসবাস করার কারণে শৈশবেই 'কালেমা' শিখেছিলেন অধ্যাপক দেবাশিষ ভট্টাচার্য। তিনি ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে 'মিনি সুইজারল্যান্ড' খ্যাত বৈসারনে যখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন তখনই সন্ত্রাসীরা হামলা করে।
অধ্যাপক দেবাশিষ ভট্টাচার্য জানান, মঙ্গলবার সংঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলার মাত্র ২০ মিনিট আগে ২টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি সপরিবারে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন।
তার ছেলে দেখতে পান, পর্যটকদের ভিড়ে দুইজন পুরুষকে গুলি করা হচ্ছে। তাদের পরিবার একটি গাছের পেছনে আশ্রয় নেয়। তবে শিগগিরই তারা দেখতে পান সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সন্ত্রাসীরা তাদেরসহ অন্যান্য পর্যটকদের হাঁটু গেড়ে বসতে বলে।
অধ্যাপক দেবাশিষ বলেন, এক ব্যক্তি হাঁটু গেড়ে বসার আদেশ মানেনি। এক মুখোশ পরিহিত সশস্ত্র ব্যক্তি তার কাছে গেল। তিনি ফিসফিস করে কিছু বলার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার রক্ত আমার ওপর ছিটকে পড়লো। 'অন্যরা কালেম' পাঠ করছিলেন, তা দেখে আমিও 'কালেমা' পাঠ শুরু করলাম। 'কালেমা' হল আল্লাহর প্রতি ঈমানের ঘোষণা। 'কালেমা' ইসলামে বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে।
সন্ত্রাসীরা দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল: 'কিয়া বোল রাহে হো?' (তুমি কী বলছো)? ''তারা আমাকে কালেমা পড়তে বলেনি তবুও আমি জোরে কালেমা পড়ার চেষ্টা করলাম। তারা শুধু জিজ্ঞেস করল, 'রাম নাম বল রাহে হো?' (তুমি কি রাম নাম নিচ্ছো?) আমি কালেমা পড়ছিলাম কারণ অন্যরাও পড়ছিল।''
তিনি আরও বলেন, 'আমি কালেমা জানি কারণ আমি মুসলিম পাড়ায় বড় হয়েছি। আমি জানতাম এই আয়াতগুলো, যা আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে।'
সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর, দেবাশিষ ও তার পরিবার পাশের বনের দিকে দৌড়ে যান। প্রায় ২ ঘন্টা পর কিছু স্থানীয় লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন তারা। স্থানীয়দের সাহায্যে তারা প্রধান সড়কে পৌছাতে পারে। তারপর তাদের বুক করা গাড়িতে করে শ্রীনগরে যায়। বৃহস্পতিবার তাদের আসামে পৌঁছানোর কথা ছিল।
বেঁচে ফেরার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা ডাল লেকে একটি দিন উপভোগ করেছিলাম। সন্ত্রাসী হামলার কারণে ভ্রমনের আনন্দ বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতায় পরিনত হয়।
আসাম মুখ্যমন্ত্রীর অফিস বুধবার পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে। তারা দিল্লি ও কলকাতা হয়ে শিলচরে পৌঁছাবে।
Comments