নারী ক্রিকেটার জাহানারাকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের অভিজ্ঞ পেসার ও সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলমের বিস্ফোরক অভিযোগে টালমাটাল দেশের ক্রিকেট অঙ্গন। জাতীয় দলে বঞ্চনা নিয়ে দিন কয়েক আগে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ উগরে দেয়ার পর এবার যৌন হেনস্তা, শারীরিক নির্যাতন, দলীয় রাজনীতি ও ক্যারিয়ার ধ্বংসের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত প্রায় পৌনে ১২টায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, সাবেক নারী দলের এক সদস্যের মাধ্যমে গণমাধ্যমে উত্থাপিত কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম, অশালীন আচরণ ও নির্যাতনের অভিযোগকে উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা হয়েছে। অভিযোগগুলোর সংবেদনশীলতা বিবেচনায় বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গঠিত কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ পেয়েছে।
বিসিবি আরো জানায়, খেলোয়াড় ও কর্মীদের জন্য নিরাপদ, সম্মানজনক ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বোর্ড বদ্ধপরিকর। তদন্ত শেষে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাশাপাশি তদন্তে কোনো প্রকার প্রভাব না ফেলার লক্ষ্যে অনুমানভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নারী দলের বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধে দলীয় রাজনীতি এবং ক্যারিয়ার ধ্বংসের অভিযোগ তুলেছিলেন জাহানারা। বিসিবি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেই অভিযোগ আমলে নেয়নি। তবে আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বিস্ফোরক তথ্য উন্মোচন করেন।
জাহানারার নতুন অভিযোগ তালিকায় রয়েছেন সাবেক নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, প্রয়াত নারী বিভাগের ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদ, ম্যানেজার ফাইয়াজ, কর্মকর্তা বাবু, কোচ ইমন, ক্রিকেটার নিগার সুলতানা জ্যোতি, পিংকি, নাহিদা ও রিতুমনি। তাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার, দলীয় রাজনীতি ও হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এর মধ্যে মঞ্জু ও তৌহিদের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন জাহানারা।
এক সাক্ষাৎকারে আবেগঘন ভাষায় তিনি বলেন, মঞ্জু একদিন শারীরিক অবস্থার বিষয় জানতে গিয়ে ব্যক্তিগত তথ্যকে কেন্দ্র করে অশালীন মন্তব্য করেন। এছাড়া বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচে লাইনে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেকের পরিবর্তে আলিঙ্গন করার অভিযোগও নিয়ে আসেন তিনি, যা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল বলে দাবি।
অভিযোগে নাম ওঠার পর বিসিবির এক শীর্ষ পরিচালক জানান, এত সংখ্যক মানুষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। তিনি বলেন, এটা আমার একার পর্যায়ে নেই। বোর্ডে বিষয়টি তোলা হয়েছে। সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, ঘটনাটির প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব। সংগঠনটি অভিযোগের যথাযথ তদন্ত ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
নারীদের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো এত উচ্চ পর্যায়ের অভিযোগ সামনে এল, যা পুরো কাঠামোকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ ঘটনা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের সংস্কৃতি, ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতার জায়গাগুলো নতুন করে আলোচিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Comments