ঝিলের ধারে

বিকেলের রোদ গাছের পাতা ছুঁয়ে ঝিলের জলে নাচছিল। পুরনো কাঠের বেঞ্চে বসে ছিলো মীনা, হাতে ধরা চায়ের কাপ, কাঁধে হালকা ওড়না। তার পাশে চুপচাপ বসে আছে রুযানা, ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, চোখেমুখে চিন্তার ছাপ।
রুযানা (নিচু গলায়):
'মীনা জানিস…আমার সবসময় মনে হয়, সবাইকে খুশি রাখতে হবে। মা, বাবা, অফিসের লোক, বন্ধু, এমনকি যাদেরকে চিনি না তাদেরকে ও। কিন্তু কিছুতেই সেটা যথেষ্ট হয় না'।
মীনা (একটু হেসে):
'এই তো আমি নিজেকেই দেখছি, এক সময় আমি ঠিক তোর মতোই ছিলাম। মনে হতো সবাই কী ভাবছে - তা না জানলে যেন আমি অদৃশ্য হয়ে যাবো'।
রুযানা: 'তাহলে কীভাবে বদলে গেলি?'
মীনা: 'সময় — যত বয়স বাড়লো, তত কম ভাবি কে কী বললো। সত্যি বললে, এখন আর সেই চিন্তাগুলো মাথায় আসে না। নিজেকে নিয়ে যত কম ব্যাখ্যা দেই, তত বেশি শান্তি পাই'।
রুযানা (আশ্চর্য হয়ে): 'কিন্তু কীভাবে করিস সেটা? কঠিন না?'
মীনা (চা-এ চুমুক দিয়ে): 'হ্যাঁ, শুরুতে কঠিন ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝলাম—জীবনটা অন্যদের মতে চলার জন্য না। আমি যখন নিজেকে মেনে নিতে শিখলাম, হাসলাম মন খুলে, চুপ থাকলাম নিজের ইচ্ছায়, ভালোবাসলাম দ্বিধা ছাড়া—তখনই যেন জীবনটাকে উপভোগ করতে শিখলাম। সময় যত পার হলো, জীবন তত অর্থবহ হলো'।
রুযানা (চুপচাপ ঝিলের দিকে তাকিয়ে): 'আমি ওরকম হতে চাই… নিজের মতো'।
মীনা (নরম গলায়): 'হবি। শুরু কর একটু একটু করে। না বলতে শেখ, নিজের ইচ্ছেমতো সাজ, নিজের জায়গায় দাঁড়া। দেখবি, একদিন নিজের সাথেই সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যাবে'।
ঝিলের জল তখন নীরব, কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেও যেন কিছু কথা থেকে যায়। রুযানার মুখে এক চিলতে প্রশান্তি খেলে যায়—অদৃশ্য কিন্তু সত্যি।
Comments